সাবিনা খাতুন

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সাবিনা খাতুন। তার বাবা পেশায় দিনমজুর। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি। দিনমজুরি করে যা আয় করেন তা দিয়ে চলে পাঁচজনের সংসার। পাঁচ শতক জমির ভিটেমাটি, একটি গরু ও কয়েকটি ছাগল তাদের একমাত্র সম্পদ। 

নিয়মিত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা সাবিনা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এতে পরিবারের সবাই খুশি হলেও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে সাবিনার। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন।     

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের আরাজি ঝাড়গাঁও গ্রামের আনিসুর রহমানের মেয়ে সাবিনা খাতুন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় তিনি। ছোট বোন নাসরিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট ভাই নাহিদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনছিলেন সাবিনা। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও কখনো পিছপা হননি স্বপ্ন থেকে। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন সব অভাব ও কষ্টকে পাড়ি দিয়ে। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। প্রত্যেক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।  

স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতা, মায়ের অনুপ্রেরণা, নিজের মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে এবার ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাবিনা। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে সংসারে আর্থিক টানাপোড়নের কারণে তার মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে পরিবারের।

এ বিষয়ে সাবিনার বাবা আনিসুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই বাসার সবাই খুশি। গ্রামের মানুষ দেখতে আসছে। কিন্তু আমি হাসতে পারছি না। যখনি মনে হচ্ছে টাকার অভাবে মাইয়াটার স্বপ্ন শেষ হইয়া যাবে, বুকটা ধড়ফড় করতেছে। আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। কখনো একটা প্রাইভেট পড়াতে পারিনি। 

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সাবিনা খাতুন বলেন, আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, এটা আমার জন্যে অনেক বড় পাওয়া। আমার বাবা অসুস্থ মানুষ। এখন আর কাজ করতে পারেন না। জানি না পড়ালেখা কতদূর আর করতে পারব। আমার পরিবার বেশ গরিব। তাই কখনো প্রাইভেট খরচ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে স্কুলশিক্ষকরা আমাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। সবসময় ভালো পরামর্শ দিতেন। আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সাহস ও প্রেরণা পেয়েছি মায়ের কাছে।

সাবিনার মা বিউটি আক্তার বলেন, সাবিনা ছোটবেলায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু ডাক্তার শাহজাহান নেওয়াজের কাছে নিয়ে যাই। তিনি আমার মেয়ের চিকিৎসা দেন কিন্তু কোনো টাকা নেননি। তখন তার মহৎকর্ম আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাব। আল্লাহর ইচ্ছায় সে তো চান্স পেয়েছে। এখন ভয় কেবল অভাব, টাকার অভাবে আমার মেয়ের স্বপ্ন যেন অসম্পূর্ণ না থেকে যায়।

ঝাড়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা জীবন হক বলেন, আমাদের গ্রামে এর আগে কোনো মেয়ে মাধ্যমিকও পাস করেনি। সেই গ্রাম থেকে এবার আমরা ডাক্তার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। ছোট থেকে মেয়েটি অনেক কষ্ট করেছে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটি ডাক্তারি পড়া শেষ করতে পারবে। 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, সাবিনার জন্য শুভ কামনা। তার পরিবারকে সম্মান জানাই। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। অবশ্যই যোগাযোগ করে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন মেয়েটিকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।

এম এ সামাদ/আরএআর