নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে শত বছরের একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী বউ মেলা। স্বামীর সোহাগিনী বউ হতেই হিন্দু নারীরা ছুটে আসেন এ পূজায়। এ দিনে রেকাবি ভরা বৈশাখী ফলের ভোগের সঙ্গে কবুতর ওড়ানো হয় গাছ দেবতার উদ্দেশ্যে। তবে বউ মেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই নারী।

এ গাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে পরিচিত। কিন্তু এলাকায় এটাকে বলা হয় বউতলা। অসংখ্য নারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠা এই মেলার নাম বউ মেলা। পুরুষরাও যান তবে সংখ্যায় কম। প্রতি বছরের মতো এবারও সিদ্ধেশ্বরী কালীতলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজার আয়োজন করেছে। নারীরা মৌসুমী ফল নিয়ে লাইন ধরে বটগাছ তলে ভোগ দিচ্ছেন। মৌসুমী ফলের স্তুপ জমে উঠেছে গাছতলায়। 

সেই স্তুপীকৃত ফল পূজা অর্চনা শেষে ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদ হিসেব বিতরণ করা হচ্ছে। স্বামী-সংসারের বাঁধন যেন আমৃত্যু অটুট থাকে সেই কামনাতেই পূজার আয়োজন। পূজার পরপরই শুরু হয় সাত দিনব্যাপী বউ মেলা। আর এ বউ মেলার কারণে বটগাছটি হয়ে উঠেছে দেবতা।

স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৯৬ বছর ধরে সোনারগাঁ পৌরসভার জয়রামপুর গ্রামে শত বছরের পুরোনো বটগাছের নিচে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বউ-ঝিরা জড়ো হতেন। গৃহবধূরা এ মেলায় অংশ নেন বলে মেলার নাম দেওয়া হয়েছিল বউ মেলা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এ মেলা বন্ধ ছিল।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা ঝুড়িতে দেশীয় বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও দেবীর নামে উৎসর্গ করার জন্য পাঁঠা নিয়ে বটগাছের নিচে জড়ো হয়ে পূজা অর্চনা করছেন।

সিদ্ধেশ্বরী বটতলায় কালী পূজার আয়োজক নিলোৎপল রায় জানান, প্রায় শত বছর আগে এ এলাকার জমিদার শ্যামচরণ ভৌমিক এলাকার বৌ-ঝিদের কথা চিন্তা করে এই বটগাছের তলায় মেলার আয়োজন করেছিলেন। তখন থেকেই জায়গাটির নাম হয় বউগাছতলা। এ অঞ্চলের বউয়েরা এ মেলায় একত্রিত হন।

বউ মেলায় পূজা দিতে আসা ষাটোর্ধ দিপালী রানী জানান, আমি ছোট বেলা থেকে এখানে পূজা দিয়ে আসছি। আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী হিসেবে এ বৃক্ষকে পূজা দিই। প্রথা অনুযায়ী এ বৃক্ষের গোড়ায় বিভিন্ন বয়সী নারী মাটি দিয়ে থাকেন। মাটির সঙ্গে একটি করে কড়ি দিতে হয়। এতে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্য যতজন ততবার মাটি দিতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকের তালে বৃক্ষ তলে পূজায় মগ্ন নারীরা। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে বাঁশি, কাঠের হাতি, ঘোড়া ও মৃৎশিল্পসামগ্রী, চেয়ার, পিঁড়ি, জলচৌকি ও ঐতিহ্যবাহী খই, উড়খা, কদমা, পেঁয়াজু, নিমকি, জিলাপিসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসেছে। বউ মেলা নারীদের হলেও এখানে পুরুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের পাশেই এ মেলাটির আয়োজন হয়ে থাকে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা।

শেখ ফরিদ/আরআই