অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বিষপানেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দুই কৃষকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, দুপুরের দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানেই দুই কৃষকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তাতে দুই কৃষকের মৃত্যু বিষপানে হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

ওসি বলেন, মামলার প্রধান আসামি গভীর নলকূপ অপারেটর শাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখনো তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য আসছে। দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। 

গত ২৩ মার্চ বিষপান করেন গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাই বটতলা নিমঘুটু গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি। ওই দিন রাতেই মারা যান অভিনাথ। স্বজনরা রাতেই রবি মার্ডিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মার্চ রাতে মারা যান রবিও।

শুরু থেকে মৃত অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম দাবি করে আসছিলেন, গভীর নলকূপের অপারেটর পানি না দেওয়ায় তার স্বামী বিষপান করেন। কিন্তু গভীর নলকূপ অপারেটর ও তার লোকজন দাবি করছিলেন- তারা মদপানে মারা গেছেন।

এই ঘটনায় গত ২৫ মার্চ রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম বাদী হয়ে মামলা করেন। রবি মার্ডির মৃত্যুর অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়। ওই মামলার বাদী রবির ভাই সুশীল মার্ডি। দুটি মামলাতেই একমাত্র আসামি করা হয় গভীর নলকূপ অপারেটর শাখাওয়াত হোসেনকে।

১১ দিন পলাতক থাকার পর ২ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন শাখাওয়াত। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত ৬ ও ৭ এপ্রিল কারা ফটকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু দুই কৃষকের আত্মহননের বিষয়ে তেমন কিছুই তার মুখ থেকে বের করা যায়নি। ফলে মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দিকেই চেয়ে ছিল পুলিশ।

এদিকে দুই কৃষকের আত্মহননের ঘটনা সামনে আসায় অভিযোগ তদন্ত করেছে বিএমডিএ। তারাও অপারেটরের বেশ কিছু অনিয়মও পেয়েছে। এরপরই  শাখাওয়াত হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। অপারেটরের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও

বিএমডিএ সূত্র জানাচ্ছে,  ২০০২ সালে গোদাগাড়ী-২ এর আওতায় ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপটি বসানো হয়। শর্ত  সাপেক্ষে সেখানে অপারেটরের দায়িত্ব পান ঈশ্বরীপুর এলাকার মৃত হারুন-অর-রশিদের ছেলে  শাখাওয়াত হোসেন। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে গভীর নলকূপটি চালাচ্ছিলেন শাখাওয়াত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওয়ার্ড কৃষক লীগ সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বিএমডিএর সিবিএ নেতা মেসবাউল হকের মামাতো বোনের ছেলে। এছাড়া তিনি বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিজিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিএমএফ হাসনুল ইসলাম ফারুকের কাছের মানুষ। ২০২০ ও ২০২১  সালে শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও এই দুই নেতার খুটির জোরে পার পেয়ে যান শাখাওয়াত। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর