১২ বছর পর মুক্তি পেল কুমু
১২ বছর আগে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ খুঁজে পায় ১০ বছর বয়সী কুমুকে। তারপর তার ঠিকানা ও মা-বাবার পরিচয় না পেয়ে পুলিশ আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে সেফ হোমে পাঠান। তত দিনে তিনি এখন তরুণী। দীর্ঘদিন পর এক পরিবার তার দায়িত্ব নেওয়ায় আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পান তিনি।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) ফরিদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালত শফিকুল ইসলাম কুমুর জবানবন্দি নেন। পরে তিনি পরিবারের জিম্মায় যেতে চাইলে তাকে মুক্তি দেন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, পথ হারিয়ে শিশুটি তখন এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছিল। পরে পুলিশ তার নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করলেও সে বলতে পারেনি। পুলিশ সাধ্যমতো তার পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ছদ্মনাম ‘কুমু’ দিয়ে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল।
তারপর আদালত শিশুটিকে ফরিদপুর জেলা সমাজসেবার মাধ্যমে সেফ হোমে পাঠান। সেই থেকে সেফ হোমই ছিল তার ঘরবাড়ি। তবে সে তার মা-বাবার নাম-পরিচয় মনে করতে পারেনি। তাই ১২ বছর কাটিয়ে হয়ে ওঠেন পরিণত তরুণী।
বিজ্ঞাপন
এত দিন পর তরুণী কুমুর বিষয়ে জানতে পারে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুর ইউনিট। ব্লাস্টের আইনজীবী অর্চনা দাস নেমে পড়েন তার জন্য কিছু করার। প্রায় পাঁচ মাস ধরে কুমুকে কাউন্সেলিং করতে থাকেন তিনি। জানতে চেষ্টা করেন তার শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়া অতীত। তাতেও ব্যর্থ হন তিনি।
তবে তিনি লক্ষ করেন, কুমু এখন অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। তিনি মনে করেন কুমুর একটি পরিবার দরকার। সে জন্য একটি পরিবার খোঁজা শুরু হয়। অবশেষে সমাজসেবা গাজীপুরের এক উপতত্ত্বাবধায়ক তার দায়িত্ব নিতে রাজি হন। তিনি ফরিদপুরে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তাই তিনি কুমুর সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত।
ব্লাস্টের আইনজীবী অর্চনা দাস বলেন, সোমবার (১৮ এপ্রিল) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালত শফিকুল ইসলাম কুমুর জবানবন্দি নেন। কুমু এখন প্রাপ্তবয়স্ক। কুমু সেই পরিবারের সঙ্গে থাকার বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেন। তার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আদালত কুমুকে নিজ জিম্মায় মুক্ত করেন।
অর্চনা আরও বলেন, গাজীপুরের উপতত্ত্বাবধায়ক দেলোয়ার হোসেন কুমুকে তার পরিবারে বাচ্চাদের দেখভাল করার কাজ করাবেন ও তার বাড়িতেই থাকবেন।
ব্লাস্টের ফরিদপুর জেলা সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী বলেন, বন্দিদশায় শৈশব কাটিয়ে কুমু এখন মুক্ত। তিনি এখন পরিপূর্ণ তরুণী। তবে তিনি অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। ঠিকানা, মা-বাবাসহ কারও কথাই বলতে পারেন না। মুক্ত হয়ে আজ তিনি প্রায় প্রতিক্রিয়াহীন।
তিনি বলেন, কুমুরা প্রজাপতির মতো রঙিন ডানা মেলে ঘুরে বেড়াক নির্যাতনমুক্ত ও বৈষম্যহীন পৃথিবীতে, সেই প্রত্যাশা আমার।
এ বিষয়ে গাজীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের উপতত্ত্বাবধায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার পরিবারে বাচ্চাদের জন্য একজন সাহায্যকারী প্রয়োজন ছিল। তাই কুমুকে আমার বাসায় এনেছি। তিনি আরও বলেন, কুমু পরে নিরাপদ স্থানে বা চাকরি পেলে বা বিয়ে করে স্বাধীনভাবে নিজের মতো জীবন কাটাতে পারবে।
ফরিদপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এস এম আলী আহসান বলেন, কুমু আজ থেকে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে। সে তার জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে। আমাদের সেফ হোমে আরও অনেক প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী আছেন, তাদের ব্যাপারেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জহির হোসেন/এনএ