মর্জিনা বেগম (৫৫)। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের পুখুরিয়া দেউপুর মধ্যপাড়া গ্রামের অন্ধ সুলতান মিয়ার স্ত্রী। অভাবের সংসারের হাল ধরতে ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালাচ্ছেন। অটোভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করেন, তাই দিয়ে তিনবেলা অসুস্থ স্বামী ও মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেন।

জানা গেছে, কালিহাতী উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের দেউপুর মধ্যপাড়া গ্রামের অন্ধ সুলতান মিয়ার সঙ্গে ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার গোহালিয়া বাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামের মৃত হারুন মন্ডলের মেয়ে মর্জিনা বেগমের। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় অন্ধ ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হয় মর্জিনাকে। মর্জিনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলেও বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।

বিয়ের পর মর্জিনা অন্ধ স্বামীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান শুনিয়ে টাকা উপার্জন করতেন। এভাবেই কোনো রকম সংসার চলছিল। কিন্তু স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন আর গান গাইতে পারেন না। তবে মর্জিনা চান না ভিক্ষা করে জীবন চালাতে। 

এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন অটোভ্যান চালকের কাছ থেকে ভ্যান চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। পরে ১১ হাজার টাকায় একটি অটোভ্যান কেনেন। তিন বছর ধরে তিনি অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে সরকারি ভাতার জন্য বার বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও মেলেনি কার্ড।

অটোভ্যান চালক এরশাদুল হক জানান, প্রায় দেখি মর্জিনা ভ্যান গাড়ি চালাচ্ছে সড়কে। কোনো সময় মালামাল নিয়ে যাচ্ছে, আবার কোনো সময় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। নারী হয়েও সে পুরুষদের মতো ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছে। অটোভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হয়, সেই টাকায় তার সংসার চলে।

অটোভ্যানচালক মর্জিনা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে বাবা-মা অন্ধ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি। হাটবাজারগুলোতে গান গেয়ে টাকা উপার্জন করে সংসার চলত। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের হাল ধরতে অটোভ্যান চালাচ্ছি। এর আগে মানুষের বাড়ির বারান্দায় রাত কাটিয়েছি। পরে একটা ভ্যানে টাবু টাঙিয়ে সন্তান দিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। 

তিনি আরও বলেন, অটোভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকা ভ্যানের ব্যাটারি কেনার জন্য জমা করে রাখি। ভ্যান চালানোর টাকা দিয়েই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ভিক্ষা করতে মন চাই না। ভিক্ষা করলে সারা দিনে এক দেড় কেজি চাল আসবে, আবার কেউ হয়ত এক বেলা খাওয়াবে। তাতে আমার স্বামী সন্তানকে খাওয়াতে পারব না। তাই ভ্যান চালানো শিখেছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছি। আমি ধন-সম্পদ কিছু চাই না। একটা গাড়ি পাইলে সেটা দিয়ে কামাই করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকব।

তিনি আরও বলেন, একটা কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে কার্ডের জন্য টাকা চাই। তাকে টাকাও দিতে পারি না, আমার কার্ডও হয় না।

সল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম বলেন, মর্জিনা খুবই পরিশ্রমী ও সংগ্রামী নারী। অটোভ্যান চালিয়ে অসুস্থ স্বামীর দেখভাল করছে। তার অন্ধ স্বামীকে ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

এসপি