ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে অসময়ে নির্মিত সুনামগঞ্জের অনেক বাঁধ ভেঙে গেছে। কোথাও নদীর পাড় উপচে বোরো ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়া আধাপাকা ফসল ঘরে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন এসব প্রান্তিক কৃষক। কিছু ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন তারা। 

সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও ছাতক উপজেলায় তলিয়ে গেছে কৃষকের আধাপাকা ধান। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে ১৭টি হাওর ডুবেছে। এসব হাওরে নিমজ্জিত ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পুরো জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এই ধান গোলায় তুলতে হাওরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত জেলায় ১৭টি হাওর ডুবে ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধান কাটা হয়েছে ৬২ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমির।

এদিকে সুরমা নদীর পানি গতকাল সোমবার বিকেলেও বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল। মঙ্গলবার সকালে সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ৫.৯৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের কুদিরাই গ্রামের বাসিন্দা শরীফ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০-১২ কেয়ার (১ কেয়ারে ৩০ শতাংশ) জমি চাষ করেছিলাম। এই জমির উপর নির্ভর করে আমার পরিবার চলে। গতকাল রাতে পানিতে সব জমি তলিয়ে গেছে। সারা বছর কীভাবে বউ বাচ্চা নিয়ে চলব তা জানি না।

একই গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ৮ বিঘা জমি। অনেক আশা নিয়ে জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। এখন সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আধা কিয়ার জমির ধান এখন কাঁচা কেটে ফেলছি। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব। 

একই ইউনিয়নের পঞ্চগ্রামের বাসিন্দা কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনেক জমিতে ধান আবাদ করেছি। সব জমি পানিতে ডুবে গেছে। কিছু জমির ধান কাঁচা কাটতে পারছি। সেগুলোতে চাল হবে না। গরুর খড় হবে সম্ভবত। মনকে বুঝ দেওয়ার জন্য কাটা লাগছে। নয়তো কাটতাম না। 

তাহিরপুরের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুরের বাসিন্দা রনি সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগাম বন্যার পূর্বাভাস শুনে চিন্তা করছিলাম, আধাপাকা ধানই কেটে নিব। কিন্তু হঠাৎ করেই হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ভাবছিলাম পানি কমে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিকেলে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে সব জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন সারা বছর না খেয়ে থাকতে হবে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  ছোটবড় মিলিয়ে ১৭টি হাওর ডুবে গেছে। ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫১০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। হাওরের বাকি ফসল ঘরে তুলতে সর্বস্তরের মানুষ এখন ধান কাটছেন।

সাইদুর রহমান আসাদ/আরএআর