ছিল না পড়ার টেবিল-চেয়ার। তবুও থেমে থাকেননি। বিছানায় বসেই করেছেন লেখাপড়া। এসএসসি ও এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৩.৫ নম্বর পেয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। বলছিলাম জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা হরিপুর গ্রামের আলাউদ্দিন ও শাহানাজ পারভিন দম্পতির মেয়ে স্মৃতি পারভিনের কথা। মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি হলেও পড়ালেখার খরচ চালাবেন কীভাবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।

স্মৃতির বাবা দিনমজুর আর মা গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে স্মৃতি ছোট। সে হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্মৃতির বাবা। বসতবাড়ি ছাড়া তাদের ১৩ শতক আবাদি জমি রয়েছে। ওই জমিতে যে ফসল হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। 

এদিকে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে কলেজে যাওয়া শুরু করতেই আলাউদ্দিনের কষ্ট বেড়ে যায়। প্রতিদিন মেয়েকে কলেজে যাতায়াত খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে দিতেন। এ টাকা দিয়েই কষ্ট করে স্মৃতি কলেজে পড়াশোনা করেছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি এনজিও থেকে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে চব্বিশ হাজার টাকা পাওয়ায় কষ্ট কিছুটা কমে আসে।

স্মৃতি পারভিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনা খরচ দিয়েছে। জায়গা-জমি নেই বললেই চলে। কলেজে যাওয়ার সময় ৩০ টাকা দিতেন। সেই টাকা নিয়ে সকালে কলেজে যেতাম। কলেজ, প্রাইভেট শেষ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম। আমি মেডিকেলে চান্স পাওয়াতে বাবা-মা খুশি হয়েছে। কিন্তু মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত।

স্মৃতির বাবা আলাউদ্দিন ও মা শাহানাজ পারভিন বলেন, মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমরা খুশি। আমরা গরিব মানুষ। জায়গা-জমি নেই। দিনমজুরি করে কীভাবে মেয়ের লেখাপড়া করাব?

হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মৃতি খুবই ভালো ছাত্রী ছিল। ক্লাসে তার এক রোল ছিল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর একটি বেসরকারি এনজিও থেকে তাকে কিছু শিক্ষাবৃত্তির টাকা দেয়। এতে ওর বাবার কষ্ট কমে যায়। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির পর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তারা সমস্যায় পড়বে। মেয়েটি যেন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

ভাদসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেয়ে স্মৃতি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার কথা শুনে এমপি মহোদয় ভর্তি বাবদ টাকা দিতে চেয়েছেন। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি যেন অর্থের অভাবে মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে না যায়।

এসপি