পটুয়াখালীর গলাচিপায় ৩৯ জন বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীর স্বাক্ষর জাল করে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. হাফিজুর রহমান। তিনি উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রতনদী তালতলী ইউনিয়নের রতনদী গ্রামের শোভা রানী বয়স্ক ভাতার টাকা না পেলে তার ছেলে মুকুল কৃষ্ণ সেন সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। অফিস থেকে জানানো হয়, তার মায়ের নাম ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে স্বাক্ষর ও সত্যয়ন রয়েছে ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমানের। পরিবর্তিত নম্বরেই তার মায়ের ভাতার টাকা পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনা জানার পর মুকুল কৃষ্ণ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। তারপর শুরু হয় তদন্ত।

একই ওয়ার্ডের নিজহাওলা গ্রামের ভাতাভোগী জয়নব বিবির ছেলে নূর ইসলাম বলেন, আমার মায়ের ভাতার টাকা অনেক দিন ধরে আসে না। পরে অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারি আমার মায়ের মোবাইল নম্বর কে বা কারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। গত রোববার সকালে হাফিজুর ফোন দিয়ে জানান মোবাইলে তিন হাজার টাকা বিকাশে আসছে কি না। পরে চেক করে দেখি স্থানীয় কাটাখালী বাজারের বিকাশ এজেন্ট নূর হোসেনের নম্বর থেকে তিন হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।

রতনদী তালতলী গ্রামের মাজেদা বেগমের দেবর মো. মোজাম্মেল বলেন, আমার ভাবির ভাতার টাকা দীর্ঘদিন ধরে পাই না। অফিসে যেতে চাইলে আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে হাফিজুর মেম্বার বলেন, সময় হলেই টাকা চলে আসবে।

শুধু শোভা রানী, জয়নব বিবি ও মাজেদা বেগম নন, সবার মোবাইল নম্বর ও নাম পরিবর্তন করে ইউপি সদস্য তার আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের অন্যদের নম্বর দিয়ে রেখেছেন সমাজসেবা অফিসে। যখন ভাতার টাকা নম্বরে ঢুকে যায়, তখন সবার কাছ থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রায় ৩৯ জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেছি। এটা আমার ভুল ছিল। যেহেতু সবাই আমার ওয়ার্ডের ভোটার, তাই আপাতত আমি টাকা ফেরত দিচ্ছি। আমার কাছে আমার আত্মীস্বজনের ১২টি সিম রয়েছে। তাদের ভাতার টাকাও ফেরত দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কাটাখালী বাজারের জনৈক নূর হোসেন ও উলানিয়া বাজারের আরেকটি বিকাশ নম্বর থেকে ১০ জনকে ৩ হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকিদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে।

রতনদী তালতলী ইউপি চেয়ারম্যান গোলম মোস্তফা খান বলেন, ইতোমধ্যে সব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। বয়স্ক ও বিধবা ভাতায় যদি কোনো অনিয়ম থাকে, তাহলে তার তালিকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অনিয়ম থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, রতনদী তালতলী ইউনিয়নের রতনদী গ্রামের শোভা রানীর ছেলে মুকুল কৃষ্ণ সেনের অভিযোগ পাওয়ার পরই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্ত চলমান আছে। ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের নিজহাওলা গ্রামের সখিনা বিবি, জয়নব বিবি, মাহিনুর বেগম, সোনাভান বিবি ও দেলোয়ার গাজীর মোবাইল নম্বর পরিবর্তন ও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। তাদের ফরমে হাফিজুর রহমান সত্যয়ন করেছেন। এখানেই প্রমাণ হয় স্বাক্ষর জাল করে অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। তারা বিষয়টি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরা ভাতাভোগীদের দ্রুত ভাতা পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলমান আছে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুহিবুল্লাহ/এনএ