‘নদীপাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। বৃষ্টির পানিতে ১৫ দিন ধরে ধানগুলো ডুবে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে কোমর পানিতে নেমে পঁচা ধানই কাটছি।’ কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ধরলা নদীর অববাহিকার উত্তর নওয়াবস গ্রামের মাসু মিয়া।

একই গ্রামের তালেব আলী নামে আরেক বোরো চাষি বলেন, আমার আড়াই বিঘা জমির ধান পানির নিচে। আমি এ জীবনে দেখিনি চৈত্র মাসে বন্যা হয়। খড় পাওয়ার আসায় কোমর পানির নিচের ধান কাটছি। ধান তো নাই, খড়ও পচে গেছে। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দিকে যেন নজর দেওয়া হয়।

এদিকে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে বোরো ধানের আবাদ করেছেন  কৃষকরা। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধরলা, তিস্তা ও বৃহ্মপুত্র নদের অববাহিকার কৃষকরা হাঁটুসমান পানিতে আবার কোথাও কোমরসমান পানিতে নেমে আধাকাঁচাসহ পচা ধান কাটছেন।

আশানুরূপ ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখলেও ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে বলে জানান অনেক বোরো চাষি। তাদের মতে, হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খড়ও বাড়িতে নিতে পারেননি তারা। খড় ও সামান্য পরিমাণ ধান পাওয়ার আশায় তাড়াহুড়ো করে কোমর পানিতে নেমে পচে যাওয়া বোরো ধান কাটছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার নদ-নদীর বালুময় চরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবুর হোসেন জানান, ১-১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ৩৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে আগামী দু-একদিন রংপুর বিভাগে কোথাও কোথাও হালকা বজ্র বৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, জেলার নদ-নদীর তীরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বাড়লেও বোরো আবাদে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। 

জুয়েল রানা/এসপি