নূরে আলম। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের ২৩ বছর বয়সী এই যুবকের উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। ওজন ৫৫ কেজি। তাকে বলা হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বেশি উচ্চতার মানুষ। তবে বর্তমানে এই উচ্চতায় তার স্বাভাবিক কাজ-কর্মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।   

নুরে আলম উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর (দুল্লারবাজার) গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। স্থানীয়রা তাকে লারকা নামেই চেনেন।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১০ এপ্রিল কাঞ্চনশ্বর (দুল্লারবাজার) গ্রামের নওশের আলী ও নুরজাহান দম্পতির ঘরে জন্ম হয় নুরে আলমের। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে নূরে আলম তৃতীয়।

জন্মের পর থেকে উচ্চতায় হালকাভাবে বেড়ে উঠলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার দৈহিক উচ্চতা। বর্তমানে তার বয়স ২৩ বছর। উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং ওজন ৫৫ কেজি। ছোটবেলা থেকে মেধাবী হলেও বাবার সংসারে অভাবের কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। শরীরের অস্বাভাবিক গঠন স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকটা বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে নরসুন্দরের কাজ শুরু করেন।

১৫ দিন আগে তহমিনা নামে এক নারীকে বিয়ে করে শুরু করেন ঘর-সংসার। সংসারে এখন স্ত্রী আর বাকপ্রতিবন্ধী মা রয়েছে। তবে কষ্টের কথা হলো এখনো তার শরীরের উচ্চতা বেড়েই চলছে। উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পা, কোমড় ও হাঁটুসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যথাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে কিছু দিন ধরে পায়ে কালো কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে দাগ কমছে। তবে ওষুধ বন্ধ হলে আবারও বাড়ছে। 

নুরে আলম বলেন, আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বেশি উচ্চতার কারণে অনেকেই কাজে নিতে চান না। বাইরে বের হলে সবাই তাকিয়ে থাকে। অনেকের বাড়ির বারান্দায় মাথা ঠেকে যায়। বিশেষ করে যানবাহনে চলাচল করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। মাথা নিচু করে কোনো রকমে লোকাল বাসে উঠতে পারলেও সিটে বসতে বেশ কষ্ট হয়। মাথা নিচু করে বসে থাকতে হয়। শরীরের উচ্চতা বেড়েই চলছে। এটি রোধ করতে উন্নত চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। কিন্তু অর্থের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

নূরে আলমের স্ত্রী তহমিনা বেগম বলেন, বেশি উচ্চতার কারণে বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। তবে বিয়ের পর স্বামীর আচরণ ও ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। স্বামীসহ বেড়াতে গেলে সবাই তাকিয়ে থাকে। বিষয়টি খারাপ লাগলেও গর্ব করি, আমার স্বামী সব চেয়ে লম্বা ও সুদর্শন পুরুষ।

তিনি আরও বলেন, বেশি উচ্চতার কারণে মাঝে-মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পায়ের মধ্যে বেশ কিছু দাগ হয়েছে। এসব দাগ ওষুধ খেলে কমে। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলে আবারও বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরে ব্যথার সমস্যা আছে। অনেকক্ষণ কোনো কাজ করলে পা ও কোমড় ব্যথা বেড়ে যায়।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ও বয়স অনুযায়ী নুরে আলমের উচ্চতা কিছুটা বেশি। এই বয়সে উচ্চতা আরও বাড়তে পারে। এটা মূলত হরমোনজনিত সমস্যা। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেন তিনি।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি