প্রসাধনী ও মোটর পার্টসের মতো বাংলাদেশের বাজারে উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের অনীহা ছিল। ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ বন্দরটিকে শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। তবে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত বছরের আগস্ট মাস থেকে পুরোদমে পণ্য আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে পূর্ণতা পায় দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

প্রথমে গম এবং এরপর শুরু হয় চাল আমদানি। সর্বশেষ পেঁয়াজ এবং আদাও আমদানি হয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমতে শুরু করে। আগের মাসগুলোর তুলনায় এখন অন্তত ৫০ শতাংশ কম পণ্য আমদানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় বাজারগুলোতে যে দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, আমদানি খরচ তার চেয়ে কিছুটা বেশি। এছাড়া গম আমদানি করেও ভালো মুনাফা করতে পারছেন না তারা।

তবে বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পণ্য আমদানি কমলেও করোনার ধকল কাটিয়ে স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে এখন চাঙাভাব বিরাজ করছে। প্রতি মাসে গড়ে ৭০-৮০ কোটি টাকার মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিকসহ হরেক রকম পণ্য যাচ্ছে ভারতে। এসব পণ্য দেশটির ত্রিপুরা রাজ্য থেকে সরবরাহ করা হয় আশপাশের রাজ্যগুলোতে।

এদিকে কম শুল্কে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য সরকারিভাবে বিশেষ যে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেটি এখন বন্ধ রয়েছে। গত বছর সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ শতাংশ শুল্কে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল আমদানির সুযোগ পেয়েছিল। তবে এখন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের শুল্ক দিতে হবে ৬২ শতাংশ। সেজন্য চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।

তবে শুল্কমুক্ত পণ্য হওয়ায় গম আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এখন পেঁয়াজের যে দর, তা আমদানি খরচের চেয়ে কম। ফলে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে গমের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় গম আমদানিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে ভারতে ৮৬৫ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে এবং আমদানি হয়েছে ৫৩৪ ট্রাক পণ্য। সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৯০১ ট্রাক পণ্য। এর বিপরীতে আমাদানি হয়েছিল ৭৩২ ট্রাক পণ্য। অক্টোবর মাসে রপ্তানি হয় ৮৩৬ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয় ৬০১ ট্রাক পণ্য। নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয় ১০৪৯ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয় ৬৪৩ ট্রাক পণ্য। ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয় ৯০১ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয় ২৬৯ ট্রাক পণ্য।

জানুয়ারি মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৩৭৯ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয়েছে ৫৮৮ ট্রাক পণ্য। ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি হয়েছে ৮১৯ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয়েছে কেবল ৩১ ট্রাক পণ্য। আর মার্চ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১০০৬ ট্রাক পণ্য এবং আমদানি হয়েছে ২৭৩ ট্রাক পণ্য। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য। আর আমদানিকৃত পণ্যের তালিকায় আছে চাল, গম, পেঁয়াজ ও আদা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে এখন যেসব গম আমদানি করা হচ্ছে সেগুলো পুরোনো। আর প্রতি টন পুরোনো গম আমদানি হচ্ছে ৩৫০ মার্কিন ডলারে। সে হিসেবে প্রতি কেজি গমের দাম পড়ে ৩১ টাকা। আর স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা গম সরবরাহ করছেন ৩১ টাকা ৫০ পয়সা দরে। ফলে গম থেকে খুব বেশি মুনাফা করতে পারছেন না তারা।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূইয়া বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে গত মার্চ মাসে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলাম। আমদানির পরই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। ফলে নতুন করে আর পেঁয়াজ আমদানি করিনি। কারণ যে দামে বাজারে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, আমদানি খরচ তার চেয়ে অন্তত ৫ টাকা বেশি।

স্থলবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোওয়ার্ডিং এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. আক্তার হোসেন জানান, রমজান মাস হওয়ায় বাজারে গমের চাহিদা কিছুটা কম। এছাড়া ৩১ টাকা কেজি দরে গম এনে বিক্রি করে তেমন লাভ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সেজন্য আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে কিছু দিন পর ভারতে নতুন গম পাওয়া যাবে। তখন হয়তো দামও কমবে। আর দাম কমলেই আগের মতো পুরোদমে গম আমদানি হবে বন্দর দিয়ে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমদানি খরচের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে গম ও পেঁয়াজ সরবরাহ করতে হচ্ছে বাজারে। সেজন্য আমদানির পরিমাণ কমেছে। আশা করি নতুন গম আসলে দাম কমবে। তখন পুরোদমে গম আমদানি হবে বন্দর দিয়ে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পণ্য আমদানি কমেছে। আগের মাসগুলোর তুলনায় এখন অন্তত ৫০ শতাংশ কম আমদানি হচ্ছে। এতে করে রপ্তানি ও আমদানি করা পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ যেসব চার্জ আদায় করে থাকে, সেটিও অর্ধেকে নেমে এসেছে।

এসপি