হোটেলের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল সব চেয়ারে বসে খাবার খাচ্ছে লোকজন। এদিকে খাবার পরিবেশনকারীরাও মহাব্যস্ত। খালি নেই কারও হাত। কেউ এসে দিচ্ছেন ভাত, কেউ দিচ্ছেন তরকারি। হোটেলজুড়ে জমজমাটভাবে চলছে সাহরিপর্ব।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের কলেজ বাজারের কাঁচা মালপট্টিতে ‘রফিক হোটেল’-এ গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

হোটেলটি তেমন একটা বড় নয়। মালিকও তেমন অবস্থাশালী নয়। তবে জানা যায় বিস্ময়কর তথ্য। মালিক বছরের ১১ মাস হোটেলের খাবার বিক্রি করেন। এই আয় দিয়ে তিনি পুরো বছর সংসার চালান। পাশাপাশি রমজান মাসের জন্য টাকা জমা রাখেন। ওই টাকা দিয়ে হোটেলে রোজাদারদের বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতারি খাওয়ান। রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মানুষ সেখানে বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতারি খান।

রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আক্কেলপুর বাজারের এক ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী। এই রমজান মাসে খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ থাকে। এতে ইফতারি ও সাহরির রোজাদারদের কষ্ট হয়। এ জন্য সারা বছর আমার ব্যবসার থেকে কিছু টাকা পুঁজি জমা রেখে এক কাজটা করি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরে হোটেলে ইফতারি ও সাহরি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি যত দিন বাঁচব যেন এটা চালু রাখতে পারি।

স্থানীয়রা জানান, হোটেল মালিকের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন। আক্কেলপুর পৌর শহরেই তার বাসা। সাত বছর ধরে হোটেল ব্যবসায় তিনি রমজান মাসে বিনামূল্যে এ কাজ করে যাচ্ছেন। কলেজ হাটে আসা লোকজন, ব্যবসায়ীরা, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনরা এই হোটেলে সাহরি ও ইফতারি খান।

সরেজমিনে ভেতরে ঢুক দেখা গেল রফিকুল নিজ হাতে ও তার হোটেলের কর্মচারীররা ইফতারি ও সাহরির খাবার পরিবেশন করছেন। তারা সাহরির আইটেমে ছিল গরুর মাংস, মাছ, শাকভাজা। এ সময় জানান, ইফতারিতে থাকে ছোলা বুট, বুন্দা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, শরবত। এসব খেয়ে রোজাদাররা তৃপ্ত হন। তারপর তারা দোয়া করেন।

আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সঙ্গে আসা মাতাপুর গ্রামের আসলাম হোসেন বলেন, সাহরির সময় দেখি রফিক হোটেল খোলা আছে। অনেক মানুষ সাহরি খাচ্ছেন। আমিও টেবিলে বসলাম। খেয়ে ক্যাশে গিয়ে টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু হোটেল মালিক টাকা নেননি। পরে জানলাম রফিক হোটেলে সাত বছর আগে থেকে রোজাদারদের ফ্রিতে সাহরি ও ইফতারি খেতে দেওয়া হয়।

হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা এক নারী বলেন, এখানে টাকা ছাড়াই সাহরির খাবার দেওয়া হয়। এ খবর পেয়ে আমি এসে সাহরি খেয়েছি। কিন্তু তারা টাকা নেয়নি। আল্লাহ্ তাদের আরও ভালো করুন, তৌফিক দান করুন, ব্যবসায় বরকত দিন, এই দোয়া করি।

আক্কেলপুর বাজারে এসে কাজ শেষে সাহরি খেতে গিয়েছিলেন মাছ ব্যবসায়ী রশিদ। তিনি বলেন, সাহরির খাবার খেয়ে বিল দিতে গেলে হোটেল মালিক বিল নিলেন না। বললেন, রমজান মাসে এখানে সাহরি ও ইফতার খাওয়া ফ্রি। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লাগল। আমি মুগ্ধ হলাম। রমজান মাসে তিনি খুবই ভালো ও সওয়াবের একটি কাজ করছেন। এমন কাজ যদি সবাই করত।

গোপীনাথপুরের শাহিন হোসেন বলেন, আমি বাজারে এসেছিলাম। ইফতারির সময় হওয়ায় রফিক হোটেলে গিয়ে ইফতার করেছি। আমার কাছে ইফতারির টাকা নেয়নি। আমার মতো অনেকেই ইফতারি করেছেন। হোটেলের মালিক কারও কাছে টাকা নেয়নি।

আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওর্য়াড কাউন্সিলর আমিনুর ইসলাম বলেন, রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম তার হোটেলে সাত বছর ধরে ফ্রিতে সাহরি ও ইফতারি খাওয়াচ্ছেন। এটি একটি মহৎ কাজ। রফিক ছোট ব্যবসায়ী হলেও তার মন অনেক বড়।

এনএ