নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়ার (৪) নিহতের ঘটনায় প্রধান আসামি মো. রিমনের (২৩) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অস্ত্রের যোগানদাতা জুয়েলের পরিচয় মিলেছে।

জুয়েল বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত হাবিব উল্ল্যার ছোট ছেলে। সে পেশায় রংমিস্ত্রি। সে শিশু তাসপিয়া হত্যার অন্যতম আসামি আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যদিও আবদুর রহিম ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাদশাহ এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। 

বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বিষয়টা এমন নয়। বার বার জায়গা পরিবর্তনের কারণে তাকে গ্রেপ্তারে অসুবিধা হচ্ছে। আশা করি আমরা খুব তাড়াতাড়ি তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব।

অস্ত্রের যোগানদাতা জুয়েলের পরিচয় মিলেছে কি না জানতে চাইলে নাজমুল হাসান রাজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনো জুয়েলকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে আমাদের হাতে কিছু তথ্য আছে। যদি শনাক্ত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলায় যে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে জুয়েল নামে কেউ নেই। যদি শনাক্ত করা যায়, তাহলে তার নামে আগে কোনো মামলা আছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারব। 

তাসপিয়া হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রহিম, বাদশা ও জুয়েল প্রধান আসামি রিমনের এলাকার বড় ভাই। তাদের নেতৃত্বে রিমন, মহিনরা এলাকায় কর্মকাণ্ড চালায়। জুয়েলের বড় ভাই সোহেল প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছে। এলাকায় সোহেলকে পিচ্ছি সোহেল বলে ডাকত। 

এদিকে মূল আসামি মো. রিমনের জবানবন্দিতে উঠে আসে অস্ত্র সরবরাহকারী জুয়েলকে খুঁজছে পুলিশ। তবে এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। হত্যাকাণ্ডের স্থানটি জুয়েলের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটারের একটু বেশি দূরে।

তাসপিয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. সবজেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার রাতে জুয়েলের বাড়িতে তল্লাশি করেছে পুলিশ। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। সম্ভবত সে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে আমরা তাকে আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় বাবার কোলে থাকা শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া। গুলিবিদ্ধ হন শিশুটির বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও। গুলিতে তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়।

ঘটনার পরের দিন তাসপিয়ার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে রিমন, মহিন, বাদশাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মামলার প্রধান আসামি শুটার রিমনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। বৃহস্পতিবার শুটার রিমন ছাড়া বাকি চার আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন নোয়াখালীর একটি আদালত। এছাড়া  মামলার প্রধান আসামি মো. রিমন তাসপিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর আগে শিশু তাসপিয়া হত্যার পর পরই পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরা হলেন- বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ৮ নং ওয়ার্ডের আবদুল মালেকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ইমাম হোসেন স্বপন (৩০), জসিম উদ্দিন বাবর (২৩) ও দাউদ নবী রবিন (১৭)। তারা সবাই কারাগারে আছেন। 

হাসিব আল আমিন/এসপি