সংসারের আয়-রোজগার কী তা আমি জানতাম। বাবা কৃষক আর মা গৃহিণী। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া টাকাপয়সা চাইতাম না। তবু মনে মনে ইতস্তত বোধ করতাম। আমার লেখাপড়ার খরচের টাকা দিতে হলে সংসারের কিছু না কিছু বিক্রি করতে হতো। সে জন্য লেখাপড়ার ফাঁকে টিউশন করতাম।

আমার টিউশনির কথা শুনে আমাকে ধরে কেঁদে কেঁদে মা বলেছিলেন, তোমার মনের আশা পূরণ করবে আল্লাহ। মায়ের দোয়ায় আমি আজ বিসিএস ক্যাডার।

দেশের জনপ্রিয় অনলাইন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিনিধির কাছে নিজের অতীত আর অধ্যবসায়ের পর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প বলছিলেন সোহেল রানা। সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আনসার বিভাগের ক্যাডার হয়েছেন তিনি।

সোহেল রানা গাংনী পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের পূর্ব মালসাদহ গ্রামের কৃষক ছমির উদ্দীনের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেল বড়।

শিক্ষাজীবনে সোহেল পূর্বমালসাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি গাংনীর লুৎফুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সুনামের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। এ ছাড়া তিনি গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন সোহেল।

এদিকে সোহেল রানার এই কৃতিত্বে তার পূর্বমালসাদহ গ্রামে আনন্দের বন্যা বইছে।

সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইচ্ছাশক্তি মানুষকে যে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে, তার উদাহরণ আমি নিজে। কারণ, আমাদের অভাবের সংসার ছিল। তাই টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। মা-বাবার দোয়ায় আমি আজ এ পর্যন্ত এসেছি।

সোহেল রানার বাবা ছমির উদ্দীন বলেন, আমার মতো কৃষকের ছেলে আজ দেশের একজন বিসিএস অফিসার। ভাবলেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়। আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে বলে দিয়েছি কর্মজীবনে যেন অসৎ উপার্জন না করে। যদি পারো তবে একটু অবসর পেলে গরিব ছেলে-মেয়েদের বিনা পয়সায় পড়ানোর সুযোগ দিও।

সোহেল রানার এই কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহল আনন্দিত। সবাই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।

আকতারুজ্জামান/এনএ