চরম পানি সংকটে রয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরবাসী। বিশুদ্ধ পানি নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই। এর পরও পানি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তীব্র তাপদাহ ও পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকেই খাবার পানির সংকট দেখা দেয় নাচোল পৌরসভায়। গ্রাহকদের চাহিদার অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। 

তীব্র পানি সংকটে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পৌরবাসী। বারবার পৌরসভাতে ঘুরে ও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও পানি না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছরের এই সময়ে খাবার পানির সংকট থাকে নাচোল পৌরসভায়। কিন্তু চলতি বছর অত্যধিক তাপমাত্রা ও রোজার মাস হওয়ায় এই মুহূর্তে চরম সংকটে পড়েছেন পৌরবাসী। তাদের আশঙ্কা, এখনই দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ না নিলে হুমকিতে পড়বে এই অঞ্চলের মানুষ। এর প্রভাব পড়বে কৃষি ও প্রাণিসম্পদেও। 

জানা যায়, নাচোল একটি ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভা। অভিযোগ রয়েছে, এখানে প্রতি বছর পৌর কর বাড়লেও নাগরিক সুবিধা সে হারে বাড়েনি। বর্তমানে মেয়র হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন নাচোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালু। খাবার পানি সংকটে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মেয়রের বিরুদ্ধে সুবিধা বঞ্চিত পৌর নাগরিকদের রয়েছে চাপা ক্ষোভ।

নাচোল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভার পানি সরবরাহের লাইন থেকে আমরা দিনে একবার পানি পাই। এই পানিতে পান করা, গোসল করা, রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভার এই সামান্য পানি দিয়ে জনগণের চাহিদা মিটছে না। জনগণের ওপর করের বোঝা ঠিকই বাড়ছে, কিন্তু খাবার পানি দিতে ব্যর্থ পৌর কর্তৃপক্ষ।

গৃহিণী শাহনাজ পারভীন জানান, রোজার মাসে খাবার পানির যে দুর্ভোগে আছি তাতে মনে হয়, আমরা বাংলাদেশ নয়, মরুভূমির কোনো দেশে বসবাস করছি। গত কয়েকদিন ধরে বাধ্য হয়েই গোসল করা, থালাবাসন মাজা, পোশাক পরিস্কার করাসহ বিভিন্ন কাজ করছি পুকুরের অপরিষ্কার পানিতে। পৌরসভা যদি একটু উদ্যোগ নিত পানির সংকট দূর করতে, তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকতাম। 

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে পৌরসভার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। অথচ তারা যে পানি সরবরাহ দেয়, তাতে কোনোভাবেই চলছে না। পৌরসভার লাইনে কখনো এক দিন পর আবার কখনো দুদিন পর পানি আসে। নিজেদেরকে পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে ভাবতেও লজ্জা লাগে। 

কয়েকদিন আগে পৌরসভার মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা এম হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‌‘নাচোল পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আজ তিন দিন ধরে আমরা মাঠপাড়াবাসী পিপাসায় ছটপট করছি। এক ফোটা পানি দিয়ে জীবন বাঁচান। আর না হলে কয়েক ফোটা বিষ দিয়ে চিরতরে মুক্তি দেন এই যন্ত্রণা থেকে।’

জানা যায়, পৌর কর্তৃপক্ষ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে না পারায় প্রায় দুই শতাধিক সংযোগ নিজেরাই পৌরসভার পানির সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন। 

এ বিষয়ে নাচোল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, বর্তমানে নাচোল পৌরসভায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ পানির গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৮ ও ৩ নং ওয়ার্ডে পানির সংকট তীব্র রয়েছে। বর্তমানে পৌরসভার যে দুইটি ডিপটিউবওয়েল রয়েছে, তা দিয়ে এই ১৪০০ সংযোগেও সঠিকভাবে পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। 

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে আরও ৪টি ডিপটিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ঈদের পর পাইপের লাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। এই চারটি ডিপটিউবওয়েল ও পাইপ লাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে নাচোল পৌরসভার ৪২০০ পরিবারে সংযোগ দিয়ে শতভাগ খাবার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই মুহূর্তে চাহিদার ৪০ শতাংশ পানি সরবরাহ রয়েছে বলে জানান তিনি। 

তবে পানি সংকটের কথা অস্বীকার করে নাচোল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পানি সরবরাহ দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে হাতেগোনা কিছু সংযোগ ছাড়া পৌরসভায় কোনো খাবার পানির সংকট নেই। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরআই