আমিনুল ইসলামের বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। মন থেকে ভারী কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও শরীর আগের মতো সায় দেয় না। সম্ভব হয়ে ওঠে না টানা পরিশ্রমও। অথচ যে মানুষটি একসময় এলাকায় সবচেয়ে ভারী কাজগুলো করে ফেলতেন হাতের তুড়িতে, তিনি আজ বার্ধক্যের কাছে পরাজিত।

স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার ছিল আমিনুলের। ছেলেরা বিয়ে করার পর নিজেদের সংসারকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাঝেমধ্যে বাবার দেখাশোনা করলেও এই অসময়ে তাদের পাশে পাওয়া দুষ্কর।

আমিনুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের খালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশা হিসেবে একসময় ট্রাকের সহকারীর কাজ করতেন তিনি। তবে ভারী কোনো কাজে এখন আর কুলাতে পারেন না বলে বেছে নিয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি।

আলাদা কাজ করার ইচ্ছা আছে আমিনুল। কিন্তু কেউ আর নেনও না এবং নিজেও পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে এই কাজে যোগদান করেন। নিজের অপারগতা ও সহধর্মিণীকে ভালো রাখার জন্য নিশিকালীন নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন কযে যাচ্ছেন, ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

আমিনুল বলেন, যুবক বয়সে অনেক ভারী কাজ করতে পারতাম। বয়সের ভারে এখন দুর্বল। তাই আর সম্ভব হয় না। এই বয়সে সব মা-বাবারই অবসর সময় কাটানোর কথা। এ সময় সবাই আশা করেন তাদের ছেলে-মেয়েরা তাদের দেখাশোনা করবে। কিন্তু সবার ভাগ্য তো আর সমান হয় না। আশা করলেও ভাগ্যে জোটে না।

নিজের দুই ছেলেসন্তান থেকেও নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা তাদের নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে আমার সহধর্মিণী অসুস্থ। তার চিকিৎসা ও সংসার খরচ আছে। তাই রাতের বেলায় এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি। বেতন কম হলেও দায়িত্বটা বড়। কারণ জনগণের সম্পদ রক্ষা করছি। আমি আগে ট্রাকের হেলপার ছিলাম। কিন্তু সেটা এখন করতে পারি না শারীরিক কারণে।

আমিনুলের প্রহরীর চাকরির বয়স দুই বছরের মতো। এখন পবিত্র রমজান মাস চলছে। সবাই তার পরিবারের সঙ্গে সাহরি খাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু আমিনুল স্ত্রীর সঙ্গে বসে সাহরি বা ইফতার করার সুযোগ পান না দীর্ঘদিন ধরে। কারণ, পরের জানমালের দায়িত্বভার থাকে তার হাতে।

দুঃখ প্রকাশ করে আমিনুল বলেন, আমার ভাগ্য সব সময়ই এমন। আগে ট্রাকের হেলপার থাকায় বাইরে সময় কাটিয়েছি। এখন নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে বাইরে থাকি। প্রায় ১২ বছর ধরে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সাহরি-ইফতার খেতে পারিনি। তবু কোনো সমস্যা মনে করি না। কারণ আমাদের মতো দরিদ্রদের জীবন এভাবেই চলবে।

যখন ডিউটিতে আসি, স্ত্রী টিফিন বাটিতে ইফতারি-সাহরির খাবার সাজিয়ে দেন। আজ নিয়ে আসা হয়নি। আমার কর্মস্থলের পাশের হোটেলমালিক গতকালকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, বাকি সাহরিগুলো তিনি বিনামূল্যে খাওয়াবেন। তাই রমজানটা এভাবেই কাটাব।

এনএ