এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেছিলেন সুমাইয়া নাসরিন শামা। স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হয়ে মানবসেবা করার। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি ঠিকই, তবে জনসেবার আরেক রাস্তা খুলে গেছে তার। ১৪তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী। শুধু উত্তীর্ণ নন, অধিকার করেছেন প্রথম স্থান। চিকিৎসক না হতে পারার সে আক্ষেপ এবার ঘুচল তার।

সুমাইয়া নাসরিম শামা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার লক্ষ্মীকুল এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বীমা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় শামা।

অদম্য মেধাবী শামা বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুটি পরীক্ষাতেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি।

সুমাইয়া নাসরিন শামা জানান, এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থাকায় তিনি স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আইন বিভাগে। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে প্রথমদিকে খারাপ লাগা কাজ করত। কিন্তু তার পরে ভাবলাম, যেহেতু ভাগ্য আমাকে এখানে  এনে দাঁড় করিয়েছে, সেহেতু এখান থেকেই চেষ্টা করা উচিত।

তার বিশ্বাস ছিল এখানে অনেক সুযোগ আছে, চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। আমি সেই চেষ্টা করেছি। ঘুরে দাঁড়ানো আসলে সেখান থেকেই। আমার সবসময় মনে হয়েছিল, যেখানে আছি সেখানে ভালো করার চেষ্টা করি। আমার খুব বেশি আকাঙ্ক্ষা ছিল না। অনেক ভালো পজিশনে যেতে হবে এমন প্রত্যাশা ছিল না। আমার সবসময় মনে হয়েছে, যেটা সামনে আসবে সেটা আমি চেষ্টা করি।

এবারের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় সারাদেশে মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন শামা। তিনি জনান, এই অবস্থানে আসব এটা কখনো চিন্তায় ছিল না। চেষ্টা করেছি, ভেবেছিলাম একটা অবস্থান থাকবে। কিন্তু প্রথম হয়ে যাব এটা কখনো ভাবতেই পারিনি। 

নিজের এই অবস্থানের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শামা। তিনি বলেন, আমি এতদূর আসতে পেরেছি এটা আল্লার ইচ্ছায় এবং সবার অনুপ্রেরণায়। আমার সঙ্গে বাবা-মা, আইন বিভাগের শিক্ষকগণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দোয়া ছিল। আমি যে দায়িত্ব পেতে চলেছি, সেটা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারি, সততার সাথে পালন করতে পারি এ জন্য সবার দোয়া চাই। 

ফল প্রকাশের খবরটা জানতেন না শামা। তিনি বলেন, আসলে রেজাল্ট যে ওই দিন হবে সেটা আমি জানতাম না। হুট করে শুনলাম রেজাল্ট হয়েছে। আমাদের বিভাগের যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রূপ আছে, সেখানে দেওয়া হয়েছে আমাদের একজন বান্ধবী দ্বিতীয় হয়েছেন।

ওর রেজাল্ট প্রথমে আমি জানতে পারি। তখন নিজের রোল খোঁজা শুরু করলাম। আমি প্রথম দিকে প্রথম পজিশনে তাকায়নি। তারপর থেকে খোঁজা শুরু করেছিলাম। কিন্তু হুট করে চোখ পড়ল, আমার রোলটা সবার ওপরে। এটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিলো। আমি এমন ফল কল্পনাও করতে পারিনি।

শামা বলেন, আরও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। এই অবস্থানে এসেছি এর মানে অনেক কিছু শিখে ফেলেছি বা জেনে ফেলেছি তা-না। আমার অনেক কিছু ঘাটতি আছে। পড়াশুনা খুব একটা ভালোভাবে করতে পারেনি। আমার অভিজ্ঞতাও তেমন নেই। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য খুব কম সময়ে পেয়েছিলাম। এখন ঘাটতিগুলোকে পূরণ করে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আগামীতে আরও ভালো কিছু করার প্রত্যাশা থাকবে।

নিজের লক্ষ্য পূরণে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সেই বিষয়টিও জানান শামা। তিনি বলেন, ধরাবাঁধা পড়াশোনার রুটিন ছিল না। যখন যেভাবে মন চেয়েছে সেভাবে পড়াশোনা করেছি। গ্রুপ স্টাডি সেভাবে করিনি। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব সবাই অনেক সাহায্য করেছে।  আর শিক্ষকগণ অ্যাকাডেমিক যে পড়াশোনা করিয়েছেন সেটা অনেকটা আমাদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। কারণ আমাদের জুডিশিয়ারি সিলেবাস ও একাডেমি পড়াশোনা খুব সম্পর্কযুক্ত। এতে অনেক কম সময় আমি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

বাবা হিসেবে মেয়ের এই অর্জনে অনেক গর্বিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ডাক্তার হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল মেয়ের। কিন্তু আমাদের পছন্দমত মেডিকেল কলেজের সুযোগ না হয়ে ব্যাপারটা বাদ পড়ে যায়। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেয়েছিল। 

কিন্তু আমি এক বাক্যে বলেছি, আইনে পড়লে ভালো কিছু করা যাবে। যতদিন যাবে ততো দেখবে যে আমার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে, এখন পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি।

আরআই