অতিদরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের দেওয়া ভাতা মোবাইল ব্যাকিং থেকে তুলে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় একের পর এক লিখিত অভিযোগ জমা হচ্ছে থানায়। প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।

এমন ঘটনা ঘটছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। 

তিনি বলেন, জনসচেতনতায় আমরা প্রচারণা শুরু করেছি। নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হচ্ছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) উপজেলার ৬ ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। এ ছাড়া জনগণকে সচেতন করতে চেয়ারম্যানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উপকারভোগীর ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে পাঠায় সরকার। বেশ কিছুদিন ধরে নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। মূলত উপকারভোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে মোবাইলে কল করে তাদের ওটিপি নম্বর নিয়ে উত্তোলন করছে ভাতার টাকা। স্থানীয়দের দাবি, উপজেলার উপকারভোগীদের মোবাইল নম্বর প্রতারক চক্র কীভাবে পেল তা খতিয়ে দেখতে হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলে নিলেও তা উদ্ধার এমনকি প্রতারক চক্র শনাক্ত হয়নি।

চাঁদপাশা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন জানান, তার নগদ অ্যাকাউন্টে ৬৫০০ ভাতার টাকা ছিল। একজন ব্যক্তি মোবাইল নম্বরে কল করে সমাজসেবা অফিসের পরিচয় দিয়ে ওটিপি নম্বর নেয়। এরপর থেকেই আমার অ্যাকাউন্ট শূন্য হয়ে যায়। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

টাকা তুলে নেওয়ায় বাবুগঞ্জ থানায় ২৪ এপ্রিল সাধারণ ডায়েরি করেছি উল্লেখ করে দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের এনায়েত শরিফ বলেন, আমার মোবাইলে নগদ অফিসের পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায়, আপনার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। দয়া করে আপনার মোবাইলে প্রেরিত কোড নম্বরটি বলেন। কোড নম্বর বলার সাথে সাথে অ্যাকাউন্টে থাকা ২২৮৫ টাকা উধাও হয়ে যায়।

রাকুদিয়া এলাকার শহিদ হাওলাদার বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে আসছি। ভাতার টাকায় ঈদের বাজার করার ইচ্ছা ছিল। কিন্ত প্রতারক চক্র সব টাকা তুলে নিয়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।

চাঁদপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন রাড়ী বলেন, প্রতিদিন অনেক ভাতাভোগী এসে জানান তার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একটি প্রতারক চক্র এই কাজ করছে। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।

বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রায় দিনই ভাতাভোগীদের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রতারক চক্র শনাক্তের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীদের অধিকাংশেরই তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম। তাই তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশি। সহজ-সরল এসব মানুষের সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসন সবসময় করে আসছে। প্রতারণার হাত থেকে তাদের বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলায় মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার। এর মধ্যে ২৪০০ জন প্রতিবন্ধী, ৩৯২৬ জন বিধবা, ৯০৮৪ জন বয়স্ক ভাতাভোগী নগদের মাধ্যমে ভাতা উত্তোলন করেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই