সবুজ ঘাসে মোড়ানো দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠের আয়তন ২২ একর। মাঠের পশ্চিমে লাল খয়েরি আর সাদা রংয়ের মিশ্রণে ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সুউচ্চ ঈদগাহ মিনারটি যে কারও নজর কাড়ে। বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়ের জন্য গোর-এ-শহীদ মাঠ প্রস্তুত করছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। 

ঈদের দিন সকাল ৯টায় গোর-এ-শহীদ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ইমামতি করবেন মাওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী।

জানা গেছে, দিনাজপুর শহরের প্রায় মধ্যভাগে অবস্থিত ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোনো মিনার ছিল না। ২০১৫ সালে সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মাঠে ঈদগাহ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন।

 ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে সে বছরেই প্রথম ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চলছে নানা সাজসজ্জা ও ধোয়ামোছার কাজ। এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে প্রশাসন থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রচারণা চলছে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক ও পত্রপত্রিকায়।

সরেজমিনে শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে মাঠ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৫০ জন শ্রমিক মিনার ধোয়ামোছা ও সংস্কার কাজ করছেন। মিনারের পেছনে ওজুখানা ও টয়লেট সংস্কারের কাজ করছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের শ্রমিকেরা। পৌর কর্তৃপক্ষ মাঠের গর্ত ভরাট ও রোলার দিয়ে মাঠ সমান করছেন। ধুলাবালু রোধে মাঠে পানি দিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। মিনারের গোড়ায় বসানো হয়েছে ৩০টি হ্যালোজেন লাইট। মাঠের চারপাশে ১৯টি প্রবেশ পথ তৈরি করা হচ্ছে। মাঠে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।

প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠের সংস্কার কাজ দেখভাল করছেন পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল আলম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোর-এ-শহীদ ময়দানে স্থাপিত ঈদগাহ মিনারটি তৈরি করা হয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতিতে। মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট ঈদগাহ মিনার। এর মধ্যে দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট আর টাইলস করা মেহরাবের উচ্চতা ৪৭ ফুট। এতে খিলান আছে ৩২টি। প্রতিটি গম্বুজে আছে বৈদ্যুতিক বাতি। মসজিদে নববি, কুয়েত ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে তৈরি মিনারটির নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ১৩ এপ্রিলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জর শোলাকিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ মাঠ। তবে আয়তনের দিক থেকে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠ শোলাকিয়ার চেয়ে প্রায় চার গুণ বড়। এশিয়া মহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ আর একটিও নেই।  এখন ধোয়ামোছা ও পরিষ্কারের কাজ করছেন ৫০ জন শ্রমিক। নামাজে আগত  মুসল্লিদের মাঠের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

মাঠকর্মী হুসেন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৫০ জন শ্রমিক ১০ থেকে ১২ দিন ধরে মাঠের সংস্কারের কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের মাঠের সকল কাজ প্রায় শেষ। টুকিটাকি কিছু কাজ বাকি আছে। আগামীকালের মধ্যে শেষে হয়ে যাবে। 

স্থানীয় যুবক রাকিব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এশিয়ার সর্ববৃহৎ গোর-এ শহীদ বড় মাঠ দিনাজপুরের গর্ব। গত দুই বছর ধরে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার ঈদের জামাত হবে। আমারা সবাই এ মাঠে এসে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি। 

আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদগাহ মাঠজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সিসিটিভি স্থাপনের পাশাপাশি থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও থাকবেন।

জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুসল্লিদের আসার জন্য উপজেলা পর্যায়ে বাস সরবরাহ করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন একটি মেডিকেল টিম গঠন করে দিয়েছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রতিবছরই এখানে ৫ থেকে ৬ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। পরপর দুই বছর করোনার কারণে এখানে ঈদের জামাত হয়নি। বর্তমানে করোনার প্রকোপ নেই, তাই এবার আরও বেশি মুসল্লির সমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। 

ইমরান আলী সোহাগ/আরএআর