পাবনার বেড়ায় চার শতাধিক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’। মাত্র দুই টাকায় অসহায়দের জন্য ঈদবাজারের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। 

রোববার (১ মে) দুপুরে বেড়া পৌরসভাধীন স্যান্ডালপাড়া এলাকায় সংগঠনটির ঈদবাজার কর্মসূচির মাধ্যমে চার শতাধিক মানুষের মধ্যে ময়দা, চিনি, সেমাই, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, লবণ, সাবান ইত্যাদি বিতরণ করা হয়। 

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আশিফ শামস রঞ্জন ও বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার।

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ আমাদের শিক্ষা দেয়- অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আগামীতে সংগঠনের সদস্যদের দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিচালনা করা হবে।

দুই টাকায় কেনাকাটা করা বিধবা রোকসানা খাতুন বলেন, রোজার মাসে মানুষের বাড়িতে তেমন কাজকর্ম নেই।  আমার স্বামী মারা যাওয়ায় অনেক অসহায় অবস্থা দিন পার করছি। গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনো মতো চলছে। চিন্তায় ছিলাম এবার ঈদে ছেলে-মেয়েদের সেমাইও খাওয়াতে পারব না। কিন্তু সংগঠনটির ঈদ বাজার সেই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমি আজ অনেক খুশি। এত কম টাকায় ঈদের ভালো বাজার করতে পারব চিন্তাও করতে পারিনি। 

নামমাত্র মূল্যে কেনাকাটা করতে পেরে খুশি রিকশাচালক মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের বাজার নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে এবার এসব বাজার করার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। পরে শুনলাম এলাকার ছেলেরা মানুষের জন্য দুই টাকায় ঈদের বাজারের ব্যবস্থা করেছে। খবর পেয়েই চলে আসি। খুবই ভালো লাগছে বাজার করতে পেরে।

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি মেহরাব হোসাইন জীম বলেন, আমাদের সমাজে এখনও অনেক মানুষ তাদের পরিবারের খাবার যোগাতে অক্ষম। এদেরকে অনেক সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা করলেও কিছু মানুষ সম্মান ও লজ্জার কারণে বঞ্চিতই থেকে যায়। মূলত তাদের কথা মাথায় নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। আমরা চেয়েছি, অসহায় মানুষেরা যেন ক্রয় করে নেওয়ার অনুভূতি পান। তারা বিষয়টি দান হিসেবে যাতে না নেন, সেটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা এটা করেছি। নামমাত্র দুই টাকা নিয়ে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে করা হবে ইনশাআল্লাহ।

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনটি করোনার শুরু থেকেই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। চরাঞ্চলে মানুষের জন্য বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন ও সার্টিফিকেট সরবরাহ করে ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। এছাড়া সংগঠনটি এ বছর রমজান মাসজুড়ে পাবনার বেড়া অঞ্চলে বিনামূল্যে তিনটি এতিমখানাসহ ৫ হাজার মানুষের জন্য ইফতার ও সাহরির আয়োজন করেছে। এছাড়া ৬০ জন মাদ্রারাসা শিক্ষার্থীর জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামার ব্যবস্থা করেছে। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর