ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের আনন্দটুকু ভাগাভাগি করতে মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন নিজ ভূমিতে। কিন্তু কিছু শিশু-কিশোর আছে যারা খুব অল্প বয়স থেকে পরিবার ছাড়া। সহায় সম্বলহীন ভাবে বেড়ে উঠা জীবন নিয়ে চার দেয়ালের মাঝে কাটাবে তাদের ঈদ। প্রিয়জন ও পরিবার ছাড়া ঈদ কতটা নিরানন্দ হয় যার মা-বাবা নেই শুধু সেই বুঝে।

বলছি কুড়িগ্রামের সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কেন্দ্রের কথা। এখানে পুনর্বাসিত হয়ে এমবিবিএস ডাক্তার, সেনা সদস্য ও সরকারি চাকরি পেয়েছেন অনেকে। সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে থাকা শিশু কিশোরদের কারও বাবা নেই। আবার কারও বাবা-মা দুইজনেই নেই। এসব স্বজনহারা শিশুদের ঈদের দিন কাটবে চার দেয়ালের মাঝেই। 

এখানকার শিশু কিশোরদের কাছে প্রতিবছর ঈদ উৎসব মানেই অন্য সব দিনগুলির মতই। এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ঈদে বাড়িতে যাবার ইচ্ছে করলেও তাদের পরিবারের কাছে ঈদ করাটা দুঃস্বপ্নই রয়ে যায়।

এই কেন্দ্রে আশ্রয়রত শিশু কিশোরদের খোঁজ নেওয়ার যেন কেউ নেই। এখানে ছয় বছর বয়স থেকে জীবন যাপন করছেন তারা। তবে তাদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার ইচ্ছা থাকলেও, তা আর পূরণ হয় না কখনো। জন্মটা যেন তাদের আজন্ম দুঃখে ভরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে মোট আসন সংখ্যা শতাধিক। বর্তমানে এখানে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের ৫১ জন শিশু কিশোর। এই ৫১ জন শিশুদের মধ্যে মা-বাবা নেই শুধু ৭ জনের। আবার অনেকের শুধু মা আছে। তারা ঈদের দিন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেলেও পরিবারে অভাব অনটন থাকায় যেতে পারছে না। কেন্দ্রের ভেতরে বুকের ভিতর একরাশ কষ্ট চাপা দিয়ে ঈদের দিন অতিবাহিত করবে তারা।

কুড়িগ্রাম সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এই কেন্দ্রটি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিত হয়েছে ১৪ জন সেনা সদস্য, এমবিবিএস ডাক্তার, ব্যবসায়ীসহ সরকারি দপ্তরে অনেকে কর্মকর্তা।

কুড়িগ্রাম সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কেন্দ্রের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিয়াম ও মিশন বলেন, আমাদের এখানের ঈদের দিন ভালো মানের খাওয়া দাওয়া হবে। এখানে ঈদ করে বাড়ি যাব আমরা। এখানে ঈদ করলে ভালো খাইতে পারি বাড়িতে তো আর ভালো খাবার পাব না।

কুড়িগ্রাম শিশু পরিবার কেন্দ্রের উপ-তত্ত্বাবধায়ক সুকান্ত সরকার বলেন, এখানে মোট শতাধিক আসন রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে রয়েছে ৫১ জন শিশু-কিশোর আছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি শিশু কিশোরদের জন্য নতুন জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা আছে। যাতে তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে না যাওয়ার কষ্টটা ভুলে যায়। এসব এতিম বাচ্চাদের সব সময় আমরা আদর দিয়ে তাদের দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি।

কুড়িগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, শিশুরা যাতে মন খারাপ না করে, সেজন্য ঈদের দিন তাদের পছন্দ মতো কাপড়, ভালো খাবারসহ ঈদের দিনটিকে আনন্দময় করতে নানান প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

মো. জুয়েল রানা/আইএসএইচ