দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় গত শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টার পর থেকে দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন কয়েক হাজার জেলে। নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন পার হলেও নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলেনি। ফলে দুচিন্তা নিয়েই ঘাটে ফিরেছেন জেলেরা। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় মহাজনের দাদনের টাকা ও এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে ভোলার ইলিশা, তুলাতুলী, নাছির মাঝি, ভাংতির খাল, জোরখাল,ভোলার খালসহ বেশ কয়েকটি মাছ ঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

কথা হয় ধনিয়া ইউনিয়নের ফরিদ মাঝির সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘অভিযানের পর থেকে নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যায় না। ইলিশের কথা নাই কইলাম। সরকার অভিযান দেয় আমাগোরে মারণের লইগা। নদীতে যহন মাছ আছিলো, তহন অভিযান দিয়া দিছে। এহন অভিযান শ্যাষ, কিন্তু নদীতে কোনো মাছ নাই। জাইলাগো এহন মরণের পালা, মরণ ছাড়া উপায় নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘গেছেকাইল রাইত ৭ জন ভাগিদার ৮০০ টাকার জাল সাবার লইয়া নদীতে গেছি, সকালে আইছি। এতে আমরা ৭টা ইলিশের কড়া আর কয়ডা পোয়া মাছ পাইছি। ওই মাছ বেইচা ১৪০০ টাকা হইছে। তেলের টাকা বাদ দিলে কি থাহে।’

আব্দুর রব নামে এক জেলে বলেন, ‘অনেক আশা নিয়া অভিযানের সময় খাইয়া না খাইয়া আছিলাম, নদীত যাই নাই। এহন অভিযান শেষে নদীতে মাছ নাই। তেল পুইরা আইজ পাঁচ দিন নদীতে যেই মাছ পাইছি, তা দিয়া আমাগো ভাত তো দূরের কথা তেলের টাকাই ওঠে নাই। সমিতির স্যারেরা প্রতিদিন বাড়িত আইয়া টাকার তাগিদ দেয়। এহন যেই অবস্থা বাড়ি থুইয়া পলান ছাড়া উপায় নাই।’

খালেক মাঝি বলেন, ‘অভিযান শেষে ভাবছিলাম নদীতে গিয়া অনেক ইলিশ পামু। আর তা দিয়া সব দেনা পরিশোধ কইরা বউ পোলাইন লইয়া ভালোভাবে দুইডা ডাইল ভাত খাইতে পারমু। সেই আশা আর পূরণ হলো না। ঈদে পোলাইনের লইগা নতুন জামা তো দূরের কথা মুখে একটু সেমাইও দিতে পারি নাই।’

ধনিয়া তুলাতুলী মাছ ঘাটের আড়তদার মো. নাছিম বলেন, নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না থাকায় আমাদের ব্যস্ততা কম। অভিযান শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে শুধু ইলিশ নয় অন্য প্রজাতির মাছের দেখাও পায়নি। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর তেমন কোনো মাছ ঘাটে আসেনি। এ কারণে ঘাটে বেচাকেনা নাই বললেই চলে । এখন দুঃচিন্তায় পড়ে গেছি। মোকামে কী মাছ পাঠাবো। ঈদ উপলক্ষে মোকাম থেকে মাছের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে।

ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, এই অভিযানের সময় আমাদের জেলেদের সরকারের পক্ষে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের চাল ৫০ থেকে ৬০ কেজি করে দিছে। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরও বাকি দুই মাসের চাল জেলেরা এখনও পায়নি। গত শনিবার রাত থেকে জেলেরা নদীতে নামছে। কিন্তু নদীতে মাছ কম থাকায় জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলেদের এই দুঃসময়ে তাদের পুনর্বাসন করা না হলে জীবনযাপন খুব কঠিন হয়ে যাবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটারসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মিঠা পানিতে ইলিশ বিচরণ করে। এ সময়টা ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমান সময়টায় তারা বিচরণ শেষে সাগর মোহনায় চলে যায়। এ কারণে সাগর ও সাগর মোহনায় ইলিশের পরিমাণ বেশি আর মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে পুনরায় মেঘনা তেঁতুলিয়া ইলিশের দেখা মিলবে।

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর