মা হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। স্নেহ, মমতা, আদর, ভালোবাসার ভান্ডার হলেন মা। যা কখনোই শেষ হওয়ার নয়। মায়ের চেয়ে আপন পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না। তাই মাকে নিয়ে গল্প-কবিতা, মহৎ কর্মের দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি।

কবি কাদের নেওয়াজ তার মা কবিতায় মায়ের ভালোবাসা এভাবে ফুটিয়েছিলেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই’।

বিভিন্ন সময় ধরে বিভিন্ন মানুষ নানাভাবে মায়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে সবুজ ও বেগুনির মিশেলে ধানখেতে ফুটিয়ে তুলেছেন মায়ের প্রতি ভালোবাসার তেমন এক নিদর্শন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় থেকে গফরগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে কিছু পথ এগোলেই সড়কের ধারে হঠাৎ চোখ আটকে যায়। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে বেগুনি রঙের ধানের চারার মাঝে সবুজ ধানে এঁকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। যা দেখে থমকে যায় পথচলতি মানুষ। আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আবার অনেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেন।

জানা যায়, কৃষক এনামুল হক শ্রীপুর বাজারের একজন পান-সুপারি বিক্রেতা। তার বাবা আব্দুল আউয়াল মারা গেছেন আনেক আগে। মা জহুরা খাতুন অনেক সংগ্রাম করে তাকে ও তার এক বোনকে মানুষ করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র এ ব্যবসার পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করেন। এবার মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এই ধানখেতেই বেগুনি ও সবুজ ধানের চারায় ফুটিয়ে তুলেছেন ‘মা’ শব্দটি।

এনামুল জানান, বেগুনি রঙের ধানগাছ দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু তুলে ধরেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন মায়ের নাম লিখে। মা তার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি দেখেছেন, কেউ দোকানের নাম দেন ‘মায়ের দোয়া’, কেউ আবার পরিবহনে লেখেন। তিনি যেহেতু কৃষক, তাই ধানের জমিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন মাকে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তিনি তার ধানখেতে সে স্বাক্ষর রেখেছেন।

মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালোবাসা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছেন সাধারণ মানুষ। এদের একজন কৃষক আয়নল হক। তিনি বলেন, মা যে কত বড় সম্পদ, যার মা নেই, সে-ই একমাত্র বোঝে। ছোট্ট বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে বহু কষ্ট করে বড় করেছেন। আমার মা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। এরপর থেকেই মাকে ছাড়া কাটিয়েছি বহু বছর। মা ছাড়া যে বুকের ভেতর যে শূন্যতা, তা কাউকে বুঝবে না। বাজারে এলেই একবার হলেও দেখতে আসি মায়ের প্রতি এমন ভালোবাসা।

সাজ্জাদ হোসেন শান্ত নামের এক যুবক জানান, ফেসবুকে মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালোবাসা দেখতে পরিবার নিয়ে এসেছেন। মা শব্দের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি নিয়েছেন। একটা ভিন্ন আবেগ তৈরি হয় এনামুলের এ ধানখেতে এলে।

সন্তানের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ মা জহুরা খাতুন। তিনি জানান, ছেলের এমন কাণ্ডে তিনি নিজেও অভিভূত। তার ছেলে তাকে খুব ভালোবাসেন। সব সময় খবর নেন। দেশে অনেকেই এখন ব্যতিক্রম। বৃদ্ধ বয়েসে মা ও বাবা বোঝা হয়ে যান। তাদের খবর পর্যন্ত নেয় না। তার ছেলের মতো মায়ের প্রতি প্রত্যেক সন্তানের এমন আনুগত্য থাকার প্রয়োজন।

শিহাব খান/এনএ