বরিশাল নদী বন্দরে কাউন্টারে না মিললেও বাইরে পাওয়া যাচ্ছে লঞ্চের কেবিনের টিকিট। নোঙর করে রাখা লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ডেকে ডেকে কেবিন বিক্রি করছে দালাল চক্র। রোববার (৮ মে) সকাল থেকেই নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ দামে এসব কেবিন বিক্রি করতে দেখা গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ- লঞ্চ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই দালাল চক্র নদী বন্দরে টিকিট কালোবাজারি করছে। 

তবে নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দালাল প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার ১৫টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। এর মধ্যে দিবা সার্ভিস এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৬, গ্রীণ লাইন-৩ ও রাজারহাট সি রয়েছে। ভায়া রুটে এমভি রেডসান ও যুবরাজ-৭। এছাড়া সরাসরি বিলাসবহুল ১০টি লঞ্চ হলো- এমভি সুরভী ৯, পারাবত ১৮, মানামী, এ্যাডভেঞ্চার-১, সুরভী-৮, কুয়াকাটা-২, সুন্দরবন-১০, পারাবত-১০, পারাবত-৯ ও কীর্তনখোলা-১০।

এসব লঞ্চের ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দুই দিনের মধ্যেই আসা-যাওয়ার কেবিন ও সোফা ভাড়া হয়ে যায় বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছিল।

সর্বশেষ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে নদী বন্দরের ৩ নম্বর পন্টুনে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী রাশেদুল ইসলাম ও তার বন্ধু ইয়াসিনের সঙ্গে। রাশেদুল জানান, পারাবত-১৮ লঞ্চের কাউন্টারে ও লঞ্চে এসে যোগাযোগ করেছি। তারা কেবিন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু লঞ্চের সামনে টার্মিনালে একজন উচ্চস্বরেই সিঙ্গেল কেবিন বিক্রি করছিলেন। তার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকায় একটি কেবিন নিয়েছি।

ইয়াসিন বলেন, ১০/১২ জনের একটি গ্রুপ টার্মিনালে ডেকে ডেকে কেবিন বিক্রি করছেন। তারা সিঙ্গেল কেবিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় এবং ডাবল কেবিন সাড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি করতে করছেন। 

একটি সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নদী বন্দরে তিনজন দালাল সর্দারের নম্বর আমার কাছে আছে। দালালদের টাকা দিলে সারা বছরই কেবিন পাওয়া যায়। ঈদের সময় কিছুটা দাম বেশি রাখবে সেটিই স্বাভাবিক।

অভিজ্ঞতা থেকে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, দালাল সিন্ডিকেট লঞ্চ স্টাফদের ছাড়া চলতে পারে না। কারণ লঞ্চের টিকিট পেতে হলে তো লঞ্চ স্টাফদের সম্পৃক্ততা লাগবেই।

১ নম্বর পন্টুনে দালালদের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন ইব্রাহিম মিয়া। তিনি বলেন, কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে একটি ডাবল কেবিন নিয়েছি পাঁচ হাজার টাকায়। অনেকেই আমার মতো কেবিন নিয়েছেন। তারা টার্মিনালে এসে দালালদের খোঁজ করেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-বরিশাল ও অভ্যন্তরীণ রুটের মিলিয়ে মোট ৫৭টি লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করছে। এসব লঞ্চে কমপক্ষে দুই হাজারের মতো কেবিন রয়েছে। এসব কেবিন কালোবাজারিতে গড়ে উঠেছে দুটি পক্ষের ১২ জনের দালাল চক্র। এছাড়া লঞ্চের স্টাফরাও টিকিট কালোবাজারি করে থাকেন।

কথা হয় দুই দালালের সঙ্গে। তারা জানান, অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন নামে লঞ্চগুলোর কেবিন কিনে রেখেছেন। এখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন। লঞ্চঘাটে সচারচার বহিরাগত ১২ জন দালাল টিকিট কালোবাজারি করেন। এছাড়া প্রত্যেক লঞ্চের দুই-তিনজন নিজেদের আত্মীয়ের নামে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখেন। পরে তা বিক্রি করেন। 

দুই দালাল জানান, ১২ জনের কাছে প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৮০টি কেবিনের টিকিট থাকে। এগুলো মোবাইলে বা ঘাটে এসে তারা বিক্রি করেন।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের পরবর্তী তিন দিন নদী বন্দরে অস্বাভাবিক যাত্রী চাপ রয়েছে। যাত্রীর তুলনায় যতগুলো লঞ্চ চলাচল করে তাতে কিন্তু চাহিদা পূরণের কেবিন নেই। প্রতিটি লঞ্চে হয়তো এক থেকে দেড়শ কেবিন থাকে। কিন্তু চাহিদা থাকে অনেক। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু টিকিট কালোবাজারি হয়। আমরা অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পারাবত-১৮ লঞ্চে কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়ায় তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর