রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকাণ্ডে দেশব্যাপী তোলপাড়ের ঘটনায় গণমাধ্যমের ওপর ক্ষুব্ধ মন্ত্রীর শ্বশুরকূলের আত্মীয়-স্বজনরা।

রোববার (৮ মে) দুপুরে এ ঘটনার মূল অভিযোগকারী ও রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আকতার মনির ভাগ্নে ইমরুল কায়েস প্রান্ত তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাতে এসে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বিষোদগার করতে থাকেন গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে গালমন্দ করতেও শুনা যায়।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সরকার বিরোধী আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমই দেশের একমাত্র বিরোধী দল বলে মন্তব্য করেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের ফোনে বিভিন্ন প্রশ্নে আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত বিরক্ত ও বিব্রতবোধ করেছি। আমরা সামগ্রিক বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছিলাম, অথচ সাংবাদিকরা সামান্য একটি বিষয়কে অহেতুক টানা হেঁচড়া করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবারকে সহজ-সরল পেয়ে তারা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কথা রেকর্ড করে গণমাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কোনো অডিও এবং বক্তব্যের জন্য পরিবার থেকে অনুমতি নেয়নি। আমার মা পারসোনাল কিছু বিষয় গল্পচ্ছলে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করলেও সেগুলো মিডিয়াতে ফলাওভাবে প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এ বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জিত করছেন। যেটা না করলেও পারতেন। আপনার বড় বিষয় খেয়াল রাখেন না, অথচ ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাতামাতি করেন। আমি যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলেছি। আপনাদের সঙ্গে আমার কোন কথা নেই। 

এ সময় সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরে যাওয়ারও কথা বলেন তিনি।

এদিকে ঈশ্বরদীর নূর মহল্লায় ইমরুল কায়েসের বাড়ির এলাকায় বিভিন্ন মিডিয়াকর্মী সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন রেলমন্ত্রীর শ্বশুরকূলের লোকজন। ক্যামেরা দেখেই তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি মারধরের জন্যও উদ্দত হন তারা।

সেখানে উপস্থিত বাংলাভিশনের সংবাদকর্মী জিয়াউল হক রিপনের সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করেন। রিপন বলেন, সকাল ৯টার দিকে ওই মহল্লায় যাওয়া মাত্রই আমাদের দিকে তেড়ে আসে কয়েকজন যুবকসহ এক নারী। এ সময় তাদের গালিগালাজের মুখে আমরা বাড়ির লোকজনের কথা না শুনেই ফিরে আসতে বাধ্য হই। 

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৫ মে) দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে ট্রেনে ওঠেন ইমরুল কায়েস প্রান্ত, হাসান ও ওমর নামের তিন যাত্রী। পথিমধ্যে টিকিট চেকিংয়ের সময় তাদের জরিমানা করলে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আকতার মনির ফোনে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।  

প্রথমে রেলমন্ত্রী নিজের আত্মীয় নন বলে দাবি করলেও বিনা টিকিটের যাত্রী ও অভিযোগকারী প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নীপার গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে ভ্রমণকারীরা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগনে ও মামাতো ভাইয়ের সম্পর্কের কথা প্রকাশ হয়। 

পরে শনিবার (৭ মে) ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ড্যান্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়। 

রাকিব হাসনাত/ওএফ