লক্ষ্মীপুরে নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর নিখোঁজ চার কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভাবের সংসারে কষ্টে পরিবারের সঙ্গে দিনযাপন করছিল চার কিশোরী। এই ঈদে অন্যদের ঘরে আনন্দের ফোয়ারা বইলেও তাদের ঘরে চাঁদের আলো পৌঁছায়নি। অভাব অনটনের সংসারে সুদিন ফিরিয়ে আনতে কাজের উদ্দেশে ঘর ছাড়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের ওই চার কিশোরী। 

রোববার (৮ মে) রাত ৯টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সামিয়া আক্তার, জোবায়দা আক্তার, সিমু আক্তার ও মিতু আক্তারকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে তাদেরকে কমলনগর থানা পুলিশ বাড়িতে নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে শনিবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রামের বাদামতলি এলাকার বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশে তারা পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় নানী পরিচয়ে আকলিমা বেগম নামে একজন তাদের নিখোঁজে ঘটনায় কমলনগর থানায় ডায়েরি করে। তারা ১২-১৪ বছর বয়সী। সম্পর্কও বন্ধুর মতো।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, কাজের সন্ধানে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় বাস পায়নি। পরে নুরুল ইসলাম নামে এক পুলিশ সদস্য তাদেরকে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখে। কিন্তু তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ ও থানায় নিখোঁজ ডায়েরির মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, কাজ করে পরিবারের আর্থিক অভাব অনটন দূর করতে বাবা-মার অগোচরে ওই ৪ কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনীতে আসে। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও বেশি রাত হওয়ায় যেতে পারেনি। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের গ্যাস পাম্প এলাকায় তারা কান্নাকাটি করছিল। তাদের দেখে পুলিশ সদস্য নুরুল ইসলাম বাসায় স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। পরিচয় জানতে চাইলেও তারা তা গোপন রাখে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের অবস্থান জানাতেও তারা নিষেধ করে। পরে পুলিশের ওই সদস্য গোপনে বিষয়টি কমলনগর থানাকে অবহিত করে। 

৪ কিশোরী অন্য কারো প্ররোচনা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেনি। কেউ তাদেরকে অপহরণও করেনি। স্বেচ্ছায় সংসারের দুঃখ মুছতে উপার্জনের জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। তবে ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিমতানুর রহমান, ডিআইওয়ান একেএম আজিজুর রহমান মিয়া ও কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

জোবায়দা আক্তারের বাবা মো. ইব্রাহিম বলেন, দুই দিন ধরে বহু স্থানে তাদের খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। অভাব থাকলেও সন্তানদের বুকে আগলে রেখেছি। হঠাৎ তাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাদের খুঁজে পেয়েছি। সংশ্লিষ্টদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/ওএফ