ঈদের কারণে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ধান কাটার শ্রমিক সংকট ছিল। ফলে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সোমবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে জমিতে নুইয়ে পড়া পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, জমিতে ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না। বিশেষ করে ভবেরচর ইউনিয়নের নয়াকান্দি, ভিটিকান্দি, টেঙ্গারচর ইউনিয়নের ভাটেরচরসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। সামান্য বৃষ্টিতেই তাদের জমির ধান ডুবে যায়। 

তারা বলেন, ঈদের দিন থেকে প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জমিতে পানি জমি গেছে। আরেকটু বৃষ্টি হলে অনেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা।

সরেজমিনে উপজেলার টেঙ্গারচর, ভবেরচর, ভাটেরচর, গুয়াগাছিয়া, ইমামপুর, হোসেন্দীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্য নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। 

ভবেরচর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের কৃষক মহসিন মুন্সি জানান, এবার তিনি ৩০ কানি জমিতে ধান লাগিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে জমির সব ধান পেকে গেছে কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার কারণে এক কানি জমির ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। অন্য বছর বাইরের জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসে। গত দুই বছর করোনার সময়ও শ্রমিকের এত সংকট হয়নি। কিন্তু এবার বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এসেছে খুব কম। স্থানীয় শ্রমিক থাকলেও তারা যেসব কৃষকের ধান কাটার চুক্তি নিয়েছেন সেগুলো কেটে শেষ করতে পারছেন না। ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

ভিটিকান্দি এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর প্রতি কানি জমির ধান কাটা বাবদ খরচ পড়ত প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর এক কানি জমির ধান কাটতে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষক সোবহান মাদবর বলেন, আমার জমির ধানগুলো অতিরিক্ত পেকে যাওয়ায় গাছ শুকিয়ে অল্প বাতাসেই জমিতে লুটিয়ে আছে। ধান কাটার মতো লোক পাচ্ছি না। তাই ঘরে ধান তুলতে পারছি না। শুনতেছি ঘূর্ণিঝড় হইব। বৃষ্টি হলেই আমার ধান সব পানিতে তলাইয়া যাইব। এ বছর মনে হয় আর ধান ঘরে তুলতে পারমু না।

গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এলাহি নুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গজারিয়া উপজেলায় কিছু জমিতে ধান কাটা হয়ে গেছে। কোনো কোনো জমিতে ধান কাটা চলছে। এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।

ব.ম শামীম/এসপি