রংপুরে সরকার নির্ধারিত পাইকারি মূল্যের চেয়ে লিটারে তিন টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করায় দুই প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় প্রতিষ্ঠান দুটির গোডাউনে মজুত রাখা ৫১ হাজার ২০৪ লিটার তেল জব্দ করে তা সরকার নির্ধারিত পাইকারি মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়।

বুধবার (১১ মে) রংপুর মহানগরীর সেনপাড়া এলাকায় পাইকারি ভোজ্যতেল বিক্রয় প্রতিষ্ঠান জে.পাল অ্যান্ড কোম্পানি ও এসএস ট্রেডার্সের গোডাউনে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় খোলা বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করাসহ বেশি দামে তেল বিক্রি না করতে গোডাউন মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন ও আরিফ মিয়া। রংপুর মহানগর পুলিশের সদস্যরা অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা এবং গোডাউনে অতিরিক্ত মজুত না রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বানও জানায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ক্রয়মূল্য রশিদ দেখাতে না পারায় দুই প্রতিষ্ঠানের মালিককে দ্রুত সময়ের মধ্যে গোডাউনে মজুত রাখা তেল সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাইকারদের কাছে সরবরাহের নির্দেশ দেয়। 

অভিযান প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে খোলা বাজারের মতো পাইকারি বাজারেও ভোজ্যতেলের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা দুটি গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে পাইকারিতে লিটার প্রতি তিন টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অপরাধে জে.পাল অ্যান্ড কোম্পানি এবং এস.এস ট্রেডার্সের ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা তেলের সঠিক মূল্য রসিদ দেখাতে পারেনি।

অভিযানে জে.পাল এন্ড কোম্পানির গোডাউনে ১৬০০ লিটার সয়াবিন ও ১০ হাজার ৪০০ লিটার সুপার ও পামঅয়েল মজুত পাওয়া যায়। এসব মজুত তেলের ক্রয়-বিক্রয়ের সঠিক মূল্য রশিদ প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে পাল ব্যর্থ হন। সরকারিভাবে খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা লিটার বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হলেও জে.পাল কোম্পানির মালিক বিশ্বজিৎ পাল পাইকারিতে লিটার প্রতি ৩ টাকা বেশিতে বিক্রি করেছেন। একই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে এস.এস ট্রেডার্সে। সেখানকার গোডাউনে অভিযান চালানোর সময়ে ১২ হাজার লিটার সয়াবিন এবং সুপার ও পাম অয়েলসহ ১৪ হাজার লিটার তেল মজুত পাওয়া যায়।

আফসানা পারভীন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ যদি বেশি নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যে অনিয়ম করবে তাকে অর্থদণ্ডসহ শাস্তি দেওয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করব।

অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুর জেলার সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা খোলা বাজার মনিটরিং করার সময়ে খেয়াল করেছি সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে পাইকারি বিক্রেতারা তেল বিক্রির কোনো মূল্যরশিদ দিচ্ছেন না। ফলে খোলাবাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩০-৪০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আমরা এই অরাজকতা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। আশা করছি খুব শিগগিরই তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮ টাকা ও পাম সুপার ১৭২ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলো। এখন থেকে খোলা সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়।

এর আগে সরকারি সিদ্ধান্তে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ছিল ১৬০ টাকা। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম একলাফে লিটারপ্রতি বেড়েছে ৩৮ টাকা। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর