পাবনায় অবৈধভাবে মজুতের দায়ে জব্দকৃত সয়াবিন তেল ন্যায্য দামে কিনতে দোকানের সামনে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে অনেকে তেল না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 

জব্দকৃত তেল দুই দিনের মধ্যে বিক্রি করতে হবে- প্রশাসনের এমন নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল থেকে পাবনার আমিনপুর থানার কাশিনাথপুরের সুনিল কুমার ও লক্ষ্মণ কুমার সাহার দোকান এবং মীর ট্রেডার্সের সামনে সাধারণ ক্রেতারা লাইনে দাঁড়ান। 

এ সময় সুনিল ও লক্ষ্মণের গোডাউন থেকে সামান্য কিছু তেল বিক্রি করে দোকান বন্ধ করে সটকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। আর মীর ট্রেডার্স তেল বিক্রি করেনি বলে জানা গেছে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে না পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সাধারণ ক্রেতারা। বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশের নজরে আসলে তাদের হস্তক্ষেপে আবারও তেল বিক্রি শুরু হয়।

ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলেন, ‘চোরের মার বড় গলা, অবৈধভাবে তেল আটকে রেখে আবার ধরা খাওয়ার পরেও তেল দিতে চায় না। আমরা কি বিনা পয়সায় তেল নিতে এসেছি। ন্যায্যমূল্যের জন্য এখানে আসা। বাজারে দুইশ টাকা কেজিতে তেল বিক্রি হচ্ছে। এখানে একটু কম দামে পাওয়ার জন্য আসা।’

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, ‌‘যারা অধিক মুনাফার আশায় তেল আটকে রেখেছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে না কেন? সরকারিভাবে প্রতিটি স্থানে তেল সরবরাহ করা উচিত। তেল নিতে এসে এতো ভোগান্তিতে পড়তে হবে কেন?’

এ বিষয়ে আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, বৃষ্টির অজুহাতে তেল না দিয়েই দোকান ও গোডাউন বন্ধ করে সটকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। পরে খবর পেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। হাটের দিন হওয়ার কারণে সকলকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিলারদের গোডাউনের সামনে এনে নিয়ম অনুসারে তেল দিতে সহযোগিতা করেছি। আগামীকালও এই তেল দেওয়া হবে।

পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সবুর আলী বলেন, জব্দকৃত তেল আগের দামে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা বিক্রিতে গড়িমসি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (১১ মে) দিনব্যাপী পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া ও সাঁথিয়ার মোট ৫টি গোডাউন-দোকান অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার তেল জব্দ করে পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় গোডাউনগুলোর মালিকদেরকে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এর মধ্যে কাশিনাথপুরের বেড়ার অংশের সুনীল কুমার সাহার গোডাউনে ২৫ হাজার লিটারের তেল মজুতের পাওয়া যায়। ফলে তাকে দুই লাখ জরিমানা করা হয়। লক্ষ্মণ কুমার সাহার গোডাউনে ২০ হাজার লিটার তেল পাওয়া যায়।  তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাঁথিয়ার অংশের মীর মোহাম্মদ আবুল খায়েরের মালিকাধীন মীর ট্রেডার্সের গোডাউনে ৩০ হাজার লিটার তেল পাওয়ায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও পাবনা শহরের বড়বাজারের উত্তম কুণ্ডুর ভাই ভাই ট্রেডার্সের গোডাউনে ৪৬ হাজার লিটার তেল মজুতের অপরাধে দেড় লাখ টাকা এবং সুজানগরের শহরের ঘোষ স্টোরে ৩ হাজার ১৩৭ লিটার তেল মজুতের দায়ে মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

সুজানগরে পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাকি গোডাউনগুলোতে পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। জব্দকৃত তেলগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত পূর্বের মূল্যে দুই দিনের মধ্যে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাকিব হাসনাত/আরএআর