ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সুদূর জার্মানি থেকে লালমনিরহাটে ছুটে এসেছেন প্যাট্রিক-ইভা দম্পতি। প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে পেরে দারুন খুশি ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় এই দম্পতি। 

জানা গেছে, জার্মান নাগরিক ড. প্যাট্রিক মুলার ও বাংলাদেশের মৌসুমি আক্তার ইভার দাম্পত্য জীবনের শুরুটা সিনেমার গল্পের মতোই। ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যান ইভা। সেখানে গিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন। ওই সময় রেস্টুরেন্টে আসা-যাওয়া ছিল অর্থনীতিতে পিএইচডি করা ড. প্যাট্রিক মুলারের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এভাবে ভালো লাগাটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নেয়। ছয় মাস প্রেমের পর ইভা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন প্যাট্রিককে। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্রসন্তান ইউহান। 

এদিকে দীর্ঘ চার বছরের সংসার জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হন প্যাট্রিক। পরে ইভার পরিবারকে নিয়ে ঈদ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। বিষয়টি ইভা তার পরিবারকে জানায়। পরে ২৯ এপ্রিল জার্মান জামাই শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। ধুমধাম করে তাদের বরণ করেন লালমনিরহাট শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার মানুষ।

এদিকে প্রথমবার বিদেশি জামাই আসায় শ্বশুরবাড়িতে রান্না করা হয়েছে চাইনিজ খাবার। কিন্তু জার্মান জামাইয়ের আবদার তিনি বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন। তাইতো জামাইয়ের আবদার মেটাতে টেবিলে মাছ-মাংসসহ নানা ধরনের  খাবারের পসরা সাজানো হয়। জামাইও চামচ ব্যবহার না করে হাত দিয়ে খাবারের স্বাদ নিয়েছেন। এসব দেখে মুগ্ধ ইভার পরিবার।

শুধু তাই নয়, ঈদের পরের দিন আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের একটি গ্রামে যান। সেখানে তিনি গ্রামের মানুষদের সঙ্গে ধান কেটেছেন ও মাড়াই করেছেন। পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরার পাশাপাশি বাইসাইকেল চালিয়েছেন, খেয়েছেন পান। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে বাংলা গানের শুটিংও করেছেন। 

মৌসুমি আক্তার ইভা বলেন, প্যাট্রিক খ্রিষ্টান হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। সে একজন ভালো মনের মানুষ। তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি খুশি। 

ইভা আরও বলেন, বাঙালি রীতি মেনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এখনো করা হয়নি। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এর পরের বার বাংলাদেশে এসে করার কথা ভাবছি। 

ড. প্যাট্রিক মুলার মুসলিম হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে যার ধর্ম পালন করি। তাকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য কোনো চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ঘুরে কেমন লেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্যাট্রিক বলেন, ফেসবুক ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশের গ্রামের রঙ দেখেছি। বাস্তবে এত সুন্দর হবে ভাবতে পারিনি। এ দেশের মানুষ এতটা ভদ্র বলে শেষ করা যাবে না। ‌বিশেষ করে গ্রামের মানুষরা যেভাবে অতিথি আপ্যায়ন করেছেন তা কোনো দিন ভোলা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি অনেক আনন্দিত বাঙালি পোশাক পরে, সুস্বাদু খাবার খেয়ে। বাংলার সবুজ প্রকৃতি, ধানক্ষেত তাকে বিমোহিত করেছে।

ইভার বাবা আখতার হোসেন বলেন, দীর্ঘ দিন বিদেশ থাকার পর সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে তার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। আর বিদেশি হওয়া সত্ত্বেও জামাই তার পরিবারকে রেখে আমাদের সঙ্গে ঈদ করেছে, এটিও অনেক বড় পাওয়া। তার ভদ্র ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাদের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেছে। আমার মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।

এসপি