রাস্তার ধারেই কফি হাউস ও ফাস্টফুডের দোকানটি। তাকাতেই দেখা গেল একটি বিজ্ঞপ্তি। দোকানের ওপর টাঙানো সেই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে : ‘এত দ্বারা সকল স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, স্কুল ও কলেজের পোশাক শরীরে থাকা অবস্থায় দাদা কফি হাউস অ্যান্ড ফাস্টফুডে প্রবেশ নিষেধ’।

বিষয়টি জানতে চাইলে দোকানমালিক মো. নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসা করি, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ক্লাস চলাকালীন স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যদি আমার দোকানে কোনো কিছু কিনতে আসে, তাহলে আমি তাদের কাছে কোনো কিছুই বিক্রি করব না।

কফি বা ফাস্টফুড খাওয়ার নাম করে যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে এসে আড্ডা দিতে না পারে, সে কারণেই আমি এই বিজ্ঞপ্তিটি টাঙিয়ে দিয়েছি, বলেন তিনি।

‘দাদাভাই কফি হাউস অ্যান্ড ফাস্টফুড’ নামের দোকানটি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৪ নং শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর-সাচিলাপুর রোডে সাচিলাপুর বাজারের পাশে অবস্থিত।

শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. নাসিরুল ইসলাম ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। উদ্যমী এ মানুষটি আগে ঢাকায় শিক্ষকতা করতেন। করোনার কারণে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিটা চলে গেলে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর নিজ বাড়িতে একটি দোকানঘর করে সেখানে কফি ও ফাস্টফুডের ব্যবসা শুরু করেন।

মো. নাসিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। ২০১২ সালে ঢাকার রামপুরা আমদা ইনস্টিটিউট পলিটেকনিক অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ভালোই চলছিল আমার সবকিছু। কিন্তু হঠাৎ করোনা এসে আমার সবকিছু ওলট-পালট  করে দেয়।

দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে সেখানে আমার চাকরিটা চলে যায়। এরপর আমি বাড়িতে ফিরে আসি। বাড়িতে এসে বসে না থেকে নিজ বাড়িতেই কফি ও ফাস্টফুডের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করি। আমার দোকানটি বড় একটি বাজারের পাশে হাওয়াই ব্যবসা বর্তমানে ভালোই হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চাকরিতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার এখন আর নেই। যে ব্যবসা শুরু করেছি, সেটাতেই উন্নতি করতে চাই।

দোকানে টাঙানো বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি যখন শিক্ষকতা করতাম, তখন দেখতাম শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আড্ডায় ব্যস্ত থাকত। আমাদের এখানেও কিছু শিক্ষার্থী এই কাজ করে থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের লেখাপড়া নষ্ট না হয়, সে কারণে আমি এই বিজ্ঞপ্তিটি টাঙিয়ে দিয়েছি।

তবে টিফিন পিরিওডে এবং স্কুল বা কলেজ ছুটি শেষে কোনো শিক্ষার্থী যদি আমার দোকানে আসে, তাহলে আমি তাদের কাছে ফাস্টফুড ও কফি বিক্রি করি। তবে আমার দোকানে কোনো শিক্ষার্থীকে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ দিই না।

নাসিরুলের টাঙানো বিজ্ঞপ্তিটি দেখে এলাকার শিক্ষিত ও সচেতন মহলও তাকে প্রশংসা ও সাধুবাদ জানিয়েছেন।

স্থানীয় হাট দ্বারিয়াপুর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক রবি কুন্ড ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত ব্যবসায়ীদের মানসিকতা থাকে বেশি বেশি মুনাফা করার। কিন্তু নাসিরুল ইসলাম স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দোকানে প্রবেশ নিষেধ করার বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম নামের এক কলেজশিক্ষক বলেন, নাসিরুল ইসলাম সচেতন ও শিক্ষানুরাগী মানুষ। একজন দোকানদার হয়েও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি যে বিজ্ঞপ্তিটি টাঙিয়েছেন, তা একজন ভালো মানুষের কাজ।

এনএ