বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ চাপে আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ আসছে। তাদের এখন মাথা খারাপ। আমরা এতে আনন্দিত নয় লজ্জিত। আমাদের দেশের কিছু সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে অন্য কোনো দেশ, এটা পছন্দের ব্যাপার নয়। কিন্তু যাদের কারণে এই সেনশন এবার বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকেও সেনশন দেবে। আর সেটা হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে।

শনিবার (১৪ মে) বিকেলে রংপুর নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সারাদেশে বিএনপি ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করে রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, এবার আর ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এবার নির্বাচন হবে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। জনগণ তাদের পছন্দমতো ভোট দেবে। ব্যালট বাক্সে ভোট জমা হবে। যে বেশি ভোট পাবে, সেই নির্বাচিত হবে। আর যারা বেশি আসন পাবে, তারাই সরকার গঠন করবে। যতদিন না এই নির্বাচন ব্যবস্থা হবে, ততদিন বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা চামচামি ও দালালি করবে, তাদের সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতাদের নামে যেসব মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। তা শুনে মানুষ হাসে, কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আদালতের বিচারকও মিথ্যা অভিযোগ শুনে বিব্রত হন। সরকারকে বলি, এসব মামলা বন্ধ করেন। এখনো সময় আছে, নইলে বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা তৈরি হবে। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী, এমপি-মন্ত্রী সবাই জনগণের ধোলাই খেয়ে পালিয়েছে। এমনকি সরকারের দোসর হিসেবে সাংবাদিকরাও রেহাই পায়নি। শ্রীলঙ্কার এই পরিস্থিতি দেখে আমাদের শিখতে হবে।

মানুষ যখন আনন্দে থাকে, ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের তখন খুব কষ্ট হয়-ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কি আনন্দে আছে? কচুর লতি ৫০ টাকা কেজি। কোনো জিনিস হাতের নাগালে নেই। সবকিছুর দাম বেড়ে চলেছে। এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে সেতু এবং সড়ক নির্মাণে প্রতিমাইলে যে টাকা খরচ হয়, আমেরিকা-ব্রিটেনেও এত টাকা খরচ হয় না। কোথায় যায় এই টাকা?

আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা অন্য দল করে কিংবা অন্যদের নেতাকর্মী, তাদের কাউকে আমরা শত্রু ভাবি না। তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের আচরণ প্রতিপক্ষের মতো হচ্ছে না। তাদের আচরণে শত্রুতা প্রকাশ হচ্ছে। আজকের প্রতিবাদ তাদের বিরুদ্ধে। অন্যায়ভাবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছে সরকার। মানুষ ভালোবেসে খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রী বলেছিলেন। আজও তিনি দেশনেত্রী হয়ে আছেন। যতবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন, ততবারই প্রত্যেকটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষের নাম বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু অন্য যে আরেকটি দল রয়েছে, তাদের নেত্রী কয়টি আসনে কতবার জিততে পেরেছে, তার ইতিহাসও কিন্তু মানুষ জানে।  

এ সময় তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আমরা কোনো দিন গণতন্ত্র হত্যা করি নাই। আমরা কোনো দিন মানুষের অধিকার কেড়ে নেই নাই। আমাদের সময়ে কখনো দুর্ভিক্ষ হয় নাই। আমাদের সময়ে মানুষের উন্নয়ন হয়েছে, কল্যাণ হয়েছে। এবং সেজন্যই মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদার রহমান জোসনা, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফছার আলী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক লিটন পারভেজ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নুর হাসান সুমন প্রমুখ।
 
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য মাহফুজ উন-নবী ডন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস