ডেন্টালের ওপর নেই কোনো ডিগ্রি। চেম্বার দিয়ে কানের পাশাপাশি দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হয়েও চিকিৎসক সেজে দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলেন। অবশেষে রোববার (১৫ মে) বিকেলে সদর উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বি এন রয় মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠানের মালিক লিনটন রায় জিপ্পুকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে। সেই সঙ্গে সিলগালা করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। 

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে দাঁত ও কানের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন ভূয়া চিকিৎসক লিনটন রায়। তার বিডিএস ডিগ্রি নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেল্টাল কাউন্সিল থেকে স্বীকৃত কোনো সনদও নেই। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তিনি যে ডিগ্রি নিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। 

এমবিবিএস ডিগ্রি না থাকলেও চিকিৎসাপত্র লিখতেন তিনি। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বিএসসি (এলএমএ-ঢাকা) ও ডিটি (দক্ষিণ কোরিয়া)। এসব ডিগ্রির কোনো সনদ তিনি দেখাতে পারেনি। উল্লিখিত বিষয় স্বীকার করলে তাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে সিলগালা করা হয় তার প্রতিষ্ঠানটি।

লিনটন রায় জিপ্পু বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। লোকাল মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হলেও অন্য চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য কোনো ডিগ্রি আমার নেই। আমি স্বীকার করছি, এটা আমার অন্যায় হয়েছে। 

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মাজহারুল ইসলাম বলেন, অপচিকিৎসা দেওয়ার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বি এন রয় মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। দাঁত ও কানের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। তিনি সকল সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়। যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। পরে তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্রাকটিস প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করার আদেশ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, অপচিকিৎসার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে অনেক মানুষ ভুগছেন। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমরা চুয়াডাঙ্গায় এমন ভুয়া চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে অভিযান চালাব। যেন চুয়াডাঙ্গাবাসী অপচিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা পায়।

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা ববি। সহযোগিতায় ছিলেন সদর থানা পুলিশের একটি দল।

সম্প্রতি ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারে জাম্মি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক আহমদ জামিল মুজহারিকে (জাম্মি) দুই লাখ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়। এছাড়া শহরের কোর্টপাড়ায় চক্ষুসেবা কেন্দ্রের মালিক সামসুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

আফজালুল হক/এসপি