বাগেরহাটে প্রচণ্ড দাবদাহ, হঠাৎ বৃষ্টি এবং ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক হারে মরে যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি চাষে এমন বিপর্যয়ে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ভাইরাসের পাশাপাশি ঘেরে পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চিংড়ি মরছে। 

এ ছাড়া মৎস্য বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ না করায় চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি দপ্তরটির। তবে জেলায় ঠিক কী পরিমাণ চাষি এবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তা জানাতে পারেনি মৎস্য বিভাগ।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। জেলায় চিংড়িচাষি রয়েছেন প্রায় ৭৩ হাজার।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার চিংড়িচাষি নাহিদ হাসান বলেন, ঋণ করে তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলাম। কিন্তু চিংড়ি যখন প্রায় গ্রেডে এসেছে, তখনই ভাইরাস লেগে সব মরে গেল। কিছুদিন পরই চিংড়ি ধরার কথা ছিল। কিন্তু ধরার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।

উপজেলার যাত্রাপুরের চাষি শেখ বাদশা বলেন, ২০১৭ সালে পড়ালেখার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ জায়গা নিয়ে চিংড়ি ও সাদামাছ চাষ শুরু করি। প্রথম বছর মোটামুটি লাভবান হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই বছর পর থেকে লোকসান শুরু হয়। গত দুই বছরে লাভের বদলে শুধু ক্ষতি হচ্ছে। প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু টাকা আয় করি, তাও এই চিংড়ি চাষের পিছনে চলে যায়। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।

মোংলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন সরদার বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমার তিন বিঘা জমিতে চিংড়ির পোনা ছেড়েছিলাম। চার দিন ধরে মাছ মরে যাচ্ছে। প্রতিটা মরা মাছের গায়ে সাদা সাদা স্পট। কী রোগে মরছে বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের চিংড়িচাষি রাজীব সরদার বলেন, এখানে ৯০ ভাগ ঘেরের চিংড়ি মরে শেষ। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা ছিল চলতি মৌসুমে ঘেরের পরিবেশ ভালো যাবে এবং গত বছরের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব কি না জানিনা।

বাগেরহাট জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির জানান, দিন দিন বাগেরহাটে চিংড়ি চাষের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। একদিকে পোনা সংকট অপরদিকে রোগের প্রাদুর্ভাব। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র চাষিদের পেশা বদলানো ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.এস.এম. রাসেল বলেন, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে রামপালের দুইটি ইউনিয়নে বেশি চিংড়ি মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। ইতোমধ্যে সেখান থেকে চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কী কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, সেটি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ধারণা করছি, অতিরিক্ত গরম, হোয়াইট স্পট ভাইরাস বা মৌসুমের শেষে ভাইরাসযুক্ত চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার কারণে এমনটা হতে পারে। আমরা উপজেলা মৎস্য অফিসগুলোকে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, জেলার অধিকাংশ ঘের প্রস্তুতের আগেই চাষিরা ব্লিচিং পাউডারসহ ভাইরাস মুক্ত করণের যে সব পদ্ধতি আছে তা প্রয়োগ না করে গতানুগতিকভাবে ঘের প্রস্তত করে চিংড়ি ছাড়েন। এ ছাড়া চিংড়ির পোনা ছাড়ার আগে তা ভাইরাসমুক্ত কি না তাও পরীক্ষা করেন না। চাষিদের ঘের প্রস্তুত ও পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

তানজীম আহমেদ/আরআই