সাভারের বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মদ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। এ মামলায় আরও ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ১১ মে ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হলেও আজ (১৬ মে) সাভারে বিষয়টি জানাজানি হয়। 

সোমবার (১৬ মে) দুপুর থেকেই মামলার কপি ফটোকপি করে বিতরণ করছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মোবাইল বন্ধ করে আত্নগোপনে আছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।  

মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন, জাভেদ হোসেন পাপন, মোখলেছ, আনিসুর রহমান রতন, জসিম, কবির হোসেন মিরাজ, আলাউদ্দিন, আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরি ও জামাল উদ্দিন মীর। মামলায় ১৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আঙ্গুরি তাকে গৃহপরিচারিকা পরিচয়ে বাসায় রেখে দেহব্যবসা করিয়ে আসছিলেন। সাইফুলসহ অন্যরা তার সঙ্গে নিয়মিত শারিরিক সম্পর্কে জড়াতেন বলেও দাবি করছেন ওই নারী। 

ভুক্তভোগী ওই নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যানের সাথে আঙ্গুরির ভালো সম্পর্ক ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাকে মোখলেস ও চেয়ারম্যান মদ খাওয়াইয়া ওইসব করেছে। সাইফুল, মোখলেস পাপনে মদ খাওয়াইয়া অজ্ঞান করে যা মন চায় তাই করছে। আমার ওপর দুনিয়ার নির্যাতন করেছে। রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর, কুমিল্লাপট্টি গোলিতে তারা আমার ওপর নির্যাতন করেছে। 

প্রায় দুই মাস আগে এমন ঘটনা ঘটাইছে। পরে মামলার কাগজ লেখাইছিলাম, কিন্তু ওসি স্যার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে রাত ১২টার দিকে আমাকে ওসিসিতে ভর্তি করেন। রিপোর্টে চারজন ধরা পড়েছে। পরে উকিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেছি কোর্টে। আমার ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করছে তাদের এত সহজে ছেড়ে দিব না। 

তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ১০/১১ বছর, তখন বরিশাল থেকে ঢাকায় মামার বাসায় বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু এক লঞ্চে উঠতে গিয়ে আরেক লঞ্চে উঠে পড়ি। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় আমি লঞ্চ হারিয়ে ফেলি। সেখান থেকে মোখলেস আমাকে এনে টাকার লোভে আঙ্গুরির কাছে বিক্রি করে দেয়। এর পর থেকে আমার সাথে আঙ্গুরির পরিচয়। যখন আমার বয়স ১২, তখন আঙ্গুরি আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। 

প্রতিদিন আমার ওপর নির্যাতন করত। ঘরের মধ্যে আমাকে তালা দিয়ে বন্দী করে রাখত। ঠিকমতো খাওন-কাপড়ও দেয়নি। ওরে সবাই চেনে। এই এলাকার সবাই ওর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে। সাইফুলকে আঙ্গুরির মাধ্যমে চিনি। আঙ্গুরির সাথে সাইফুল চেয়ারম্যানের পরিচয় ছিল। মুগদা থানার ওসিসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছি। তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ করেছেন। তাদেরকে ধরতে পারছে না, পালিয়ে বেরাচ্ছে। তারা আমাকে বিভিন্ন হুমকিও দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। তবে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মুগদা থানার ৪৬/বি-১ উত্তর মানিকনগরের একটি বাসায় ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করা হয়েছে সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ দুপুরে। এ ঘটনায় পালিয়ে মুগদা থানায় গিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর মামলা না নিয়ে তাকে হয়রানি করেন। থানার এসআই এনামুল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলেও মামলা রেকর্ড না করায় ওই জোনের সহকারী কমিশনারের (এসি) কাছে গিয়েও প্রতিকার মেলেনি। পরবর্তীতে গত ১০ এপ্রিল আদালতে পিটিশন মামলা রুজু করা হয়।  

অভিযোগ রয়েছে, বিবাদীরা মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং কালো টাকা উপার্জনকারীও বটে। নারী লোভী ও পতিতা ব্যবসার সাথেও জড়িত তারা। 

বাদীর আইনজীবি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, মানবপাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। মামলা আমলে না নেওয়ায় থানার ওসিকে বিবাদী করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে জোনের এসি ও থানার এসআইকে। 

তদন্ত সংশ্লিরা জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাদীর বক্তব্য নিয়েছেন। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। সাভার মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, সাইফুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ব্যাপারে পুলিশ অবগত রয়েছেন। 

মাহিদুল মাহিদ/আরআই