দুই সপ্তাহ আগেই কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নীলফামারী জেলার কয়েকহাজার মানুষ। আর সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ঝড়ের কবলে নীলফামারীবাসী। ঝড়ে শত শত হেক্টর ফসলি জমি ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া শত শত টিনের ঘরের চালা উড়ে গেছে। ঝড়ে উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ।

বুধবার (১৮ মে) রাত ১০ টা৩০ মিনিটের দিকে শুরু হয়ে প্রায় ৪০ মিনিট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কাল বৈশাখী ঝড়।

ঝড়ে জেলার শত শত হেক্টর জমির ভুট্টা, বোরো ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। আম ও লিচুরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে আছে রাত থেকেই। বহু ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বেশ কয়েকজনের। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই স্থান নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকালে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হটাৎ এই ঝড়ে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে উপড়ে ও ভেঙে পড়ে আছে বড় বড় গাছ। উপড়ে পড়া ও ভেঙ্গে যাওয়া গাছ অপসারণের লোকের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। অনেকেই গাছ কাটা শ্রমিকের খোঁজে ছুটাছুটি করছেন। 

এদিকে কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ফসলের জমিতে পানি জমলেও গত রাতের ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। বার বার ঝড়ের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পরেছে এই অঞ্চলের মানুষ।

ইটাখোলা ইউনিয়নের হাতিবান্ধা এলাকার কৃষক সুজন মিয়া। সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে গত রাতের ঝড়ে হেলে গেছে প্রায় ৩ বিঘা জমির ধান গাছ। অন্যদিকে ঘরের ও ক্ষতি হয়েছে তার। সুজন মিয়া বলেন, কয়েক দিন থাকি বৃষ্টির জন্য পাকা ধান কাটির পাইছি না। ভাবছিনো কাল কাটমো। কিন্তু রাইতোত যে এমন হইবে কায় জানে। ঘর টাও হেলি গেলো ধান গুলাও হেলি গেলো।

একই এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতের ঝড়ে আমার চারটি ঘরের চালা উড়ে গেছে। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে খোলা আকাশে রাত কাটিয়েছি। 

ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান হেদায়েত আলী শাহ ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি। এ ছাড়া ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বহু লোকের কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরে তোলার জন্য প্রস্তুত ফসলের জমিতে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় পানি আটকে ছিল। আর গত রাতের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিক ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি। তবে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছেন।

শরিফুল ইসলাম/আরআই