রংপুর চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত থেকে তিনটি হরিণ বিক্রি করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য হিসেবে দেড় লাখ টাকায় হরিণ তিনটি কিনেছেন চট্টগ্রামের একজন সৌখিন ব্যবসায়ী। চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বর আলী তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

বুধবার (১৮ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলার চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী গহর সিরাজ জামিল হরিণ ৩টি ক্রয় করেন। হরিণগুলোর মধ্যে একটি পুরুষ ও দুটি মেয়ে হরিণ। 

রংপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যবসায়ী গহর সিরাজ জামিল হরিণ তিনটি কেনার আগে চট্টগ্রাম বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সেখানকার চিড়িয়াখানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাতে অতিরিক্ত হরিণ না থাকায় সেখান থেকে রংপুর চিড়িয়াখানার মাধ্যমে হরিণ ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। 

ডেপুটি কিউরেটর আম্বর আলী তালুকদার বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানার তিনটি শেডে ৩০-৪০টি হরিণের থাকার মতো জায়গা রয়েছে। করোনা মহামারিতে দীর্ঘসময় সরকারি নির্দেশে চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়। ওই সময়ে কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজ করছিল। গাছগাছালিতে ভরা বনজঙ্গলের নীরব, নিস্তব্ধ পরিবেশে খাঁচাবন্দী পশু-পাখির প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘোড়া, হরিণ, গাধা, বানর, ময়ূর, মদনটেকসহ আরও বেশকিছু প্রাণীর ঘরে এসেছে নতুন অতিথি।

তিনি আরও বলেন, প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হরিণের সংখ্যা বেড়ে ৫৭-তে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকে চলতি মাসে ৩টি হরিণ বিক্রির ঘোষণা দেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এই ঘোষণার পর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রংপুর থেকে তিনটি হরিণ কিনেছেন এক ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী গহর সিরাজ জামিল জানান, দীর্ঘদিনের শখ থেকে হরিণ ৩টি কিনেছেন। তবে এ জন্য তিনি হয়রানির শিকারও  হয়েছেন। চট্টগ্রামে আবেদনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনেকদিন পর রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে ৩টি হরিণ কেনার সুযোগ হয়েছে। এই ৩টি হরিণের মধ্যে ২টি মেয়ে ও ১টি পুরুষ হরিণ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (প্রাণিসম্পদ-২) এক প্রজ্ঞাপনে হরিণের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত প্রাণী বিক্রি করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু হরিণ বিক্রি করা হচ্ছে। এর আগে হরিণের দাম ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা কমিয়ে নতুন করে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র হরিণ ও ময়ূর এই দুটি প্রাণী বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। কারণ এই দুটির লালন-পালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অপেক্ষাকৃত সহজ। আগ্রহীদের এসব প্রাণী নারী-পুরুষ জোড়া ধরেই কিনতে হবে। একটি কেনা যাবে না।

সাধারণত যারা এসব প্রাণী লালন-পালনে সক্ষম, প্রাণীগুলোর দেখভাল করতে পর্যাপ্ত জায়গা ও আর্থিক সঙ্গতি আছে তাদেরকেই এসব প্রাণী পালনের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে চিড়িয়াখানা সূত্র জানিয়েছে।

তবে বন্য প্রাণী পালতে গেলে বন বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। যাদের কাছে সেই অনুমোদন পত্র বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের কাছেই প্রাণীগুলো বিক্রি করতে পারে। এই প্রাণীগুলো শুধুমাত্র লালন-পালনের জন্য দেওয়া হবে। এ ধরণের প্রাণী কোনো অবস্থাতেই পাচার, শিকার বা খাওয়া যাবে না। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই