অবিরাম বর্ষণ ও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। আকস্মিক এই বন্যা ইতোমধ্যে সিলেটের সবকটি উপজেলায় বিস্তার করেছে। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত অঞ্চলে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেসব এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে, সেসব এলাকার একমাত্র বাহন এখন নৌকা। 

জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নৌকার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এমনকি সিলেট নগরীতেও এর চাহিদা বেড়েছে।র জনদুর্ভোগ কমাতে এবং যাতায়াতের সুবিধার্থে অনেকেই এখন নৌকা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। তাইতো তারা ছুটছেন সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নৌকার হাটগুলোতে। 

গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর বাজারে নৌকা কিনতে গেছেন সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাদিকুর রহমান। সালুটিকর বাজারে নৌকা কিনতে না পেরে তিনি বলেন, আমাদের বিল্ডিংয়ের বেশিরভাগ বাসিন্দা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী। আমাদের সকালে ঘর থেকে বের হতে হয় আবার বিকেলে ফিরতে হয়। কিন্তু বাসার সামনে এখন কোমর পানি। দিন দিন পানি বাড়ছে। এভাবে কতদিন চলবে তা জানা নেই। তাই নৌকা কেনার জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু কোনো নৌকা পাইনি। 

এদিকে হঠাৎ করে নৌকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন নৌকা বিক্রেতারা। জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজারে নৌকা কিনতে আসা আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সপ্তাহখানেক  আগেও যেখানে ১২-১৫ হাত মাপের নৌকা ৮-১০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে ৩-৪ দিনের ব্যবধানে ১২-১৪ হাজারের নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

হরিপুরের চানঘাট এলাকার নৌকা বিক্রেতা মুহিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৩ হাত লম্বা নৌকা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। তবে কাঠের জাত ও মান অনুযায়ী নৌকার দামে কিছু তারতম্য আছে। কাঠ, লোহা এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় স্বভাবতই নৌকার দাম বেড়েছে। 

তিনি আরও জানান গত বছর অনেক নৌকা বিক্রি করতে পারেননি। তাই তার দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। এ বছর নৌকার চাহিদা বাড়ায় তিনি তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। 

সিলেটের বিভিন্ন নৌকার হাটে বেচাকেনার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেচাকেনা অনেক বেড়েছে। পুরো বর্ষার মৌসুমে যে পরিমাণ নৌকা বিক্রি হয় তার চেয়েও বেশি নৌকা গত তিন-চার দিনে বিক্রি হয়েছে। 

নৌকা কিনতে পেরে খুশি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার একমাত্র বাহন এখন নৌকা। অনেক বাজার ঘুরে এই বাজারে এসে নৌকা কিনতে পেরেছি। এজন্য ভালো লাগছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু মাজোরটুল এলাকার নৌকা বিক্রেতা নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই সিলেটে বন্যার পানি বাড়ার কারণে নৌকার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। অন্য সময় পুরো বর্ষায় আমরা যে পরিমাণ নৌকা বিক্রি করতে পারি না, গত তিন-চার দিনে তার চেয়েও বেশি নৌকা বিক্রি করেছি। আজকে ছয়টা নৌকা নিয়ে এই হাটে এসেছিলাম। চারটি নৌকা বিক্রি করেছি।  

মাসুদ আহমদ রনি/আরএআর