দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় হঠাৎ পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ৪ ও ৫ নং ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘাট ২টি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার সাময়িক বন্ধ রয়েছে। ২টি ঘাট একসাথে বন্ধ থাকায় ঘাট সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নদী পারের অপেক্ষায় ৭ শতাধিক যানবাহন মহাসড়কে অপেক্ষা করছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়ায় ৭টি ঘাটের মধ্যে ৪টি চালু ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি ৮০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনের ওপর পানি উঠতে থাকে। 

পন্টুনে পানি উঠতে থাকায় ফেরিতে যানবাহন ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে গেলে ঘাট দুটি বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় ৭টি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে ৩, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমানে ছোট-বড় মোট ২০টি ফেরি রয়েছে। তার মধ্যে ২টি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সেটি মেরামতের জন্য পাটুরিয়ার মধুমতি ডকইয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২০ মে) বেলা ১টায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘাট সংকটের প্রভাবে দৌলতদিয়া প্রান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ের ৫ কিলোমিটার এলাকায় বাস-ট্রাক মিলে পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকে রয়েছে। এ ছাড়া গোয়ালন্দ মোড়ে আরও দুই কিলোমিটার এলাকায় ২ শতাধিক অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি রয়েছে।

সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীবাহী বাসগুলোর ফেরির নাগাল পেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগলেও পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৮-১০ ঘণ্টার মতো।

সোহাগ পরিবহনের যাত্রী বিকাশ হালদারের সাথে কথা হয় দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল এলাকায়। তিনি ফেরির জন্য ৬ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ভোর সাড়ে ৬টায় পদ্মার মোড় এলাকায় তিনি সিরিয়ালে পড়েন। এরপর কচ্ছপ গতিতে বাস এগুতে থাকলে তিনি ৬ ঘণ্টায় আড়াই কিলোমিটার সামনে এগিয়েছেন। এখনো তিনি ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছেন। শুনেছেন ঘাট সংকটে এই ভোগান্তি।

মারুফ শেখ, হোসেন আলী, মজিদ মোল্লাসহ একাধিক ট্রাক চালক এক প্রকার আক্ষেপের সুরে বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ভোগান্তি ছাড়া নদী পার হওয়া স্বপ্নের ব্যাপার। কখনো শান্তিতে এই ঘাট দিয়ে পার হতে পারলাম না। আমরা সবাই গতকাল রাতে এসেছি। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনো ফেরির দেখা পাইনি। কখন পাবো সেটাও বলতে পারছি না।

বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, আমাদের দুই পারের মোট ৩টি ঘাটের পন্টুনে পানি উঠেছে। পাটুরিয়া প্রান্তের ঘাটটি ঠিক করা হচ্ছে। এর পর দৌলতদিয়া প্রান্তের ঘাট দুটি ঠিক করা হবে। একটি মাত্র রেকার মেশিন থাকায় ঘাট সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধিতে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নং ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুন ডুবে যাওয়াতে ঘাট দুটি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পাটুরিয়াতে একটি ঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় সেটিও বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাট দুটি দ্রুত সংস্কার করে যানবাহন পারাপারের উপযোগী করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ ৬ নম্বর ফেরি ঘাটটি চালু করা হয়েছে। বন্ধ ঘাট দুটি চালু হলে যানবাহনের সিরিয়াল কমে যাবে। বর্তমানে এই রুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে।

মীর সামসুজ্জামান/আরআই