সাতক্ষীরার বাজারে উঠেছে মৌসুমী ফল তাল। শহরের প্রেসক্লাব গেট, হাটের মোট, পিএন স্কুল মোড়, ডে নাইট স্কুল মোড়সহ উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি পিস তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকা। এক কুড়ি শাঁস ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক কুড়ি তাল ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার সাত উপজেলা ১৯ হাজার ৭৭৮টি তাল গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৭১টি, কলারোয়ায় ২ হাজার ৯২২টি, তালায় ৩ হাজার ৭১৯টি, দেবহাটায় ১ হাজার ১২২টি, কালিগঞ্জে ১ হাজার ৭১৯টি, আশাশুনিতে ২ হাজার ৩৭২ ও শ্যামনগর উপজেলায় ৪ হাজার ৩৭৩টি তাল গাছ রয়েছে।

শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফফার জানান, এখন আর আগের মতো তাল পাওয়া যায় না। আগে রাস্তার পাশে তালের রস নিয়ে বসতো, সেটি এখন আর দেখা যায় না। এখন তালের শাঁস খেতে পারছি। কিছুদিন পর এটিও আর খেতে পারবো কিনা ঠিক নেই। কেননা যেভাবে তালের গাছ কেটে নিচ্ছে, তাতে বেশি দিন আর এগুলো খাওয়া হবে না। সামনের দিনে এটি স্বপ্ন হয়ে যাবে। আগে এক কুড়ি তাল কিনতে পারতাম ৩০-৪০ টাকায়, এখন ১০০ টাকায়ও মিলছে না। 

ক্রেতা হাবিবুল হাসান বলেন, তাল একটি মৌসুমী ফল। এটি অনেক সুস্বাদু ও উপকারী। আজই প্রথম তাল খাচ্ছি। তাল গাছ কমে যাওয়ায় আগের থেকে এখন দাম বেশী। তালের স্বাদ ধরে রাখা ও গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমি সবাইকে তাল গাছ লাগানোর অনুরোধ জানাই। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। এখন শহরের প্রেসক্লাব গেটের পাশে প্রতিদিন তাল বিক্রি করছেন তিনি। রবিউল ইসলাম বলেন, আমি চার বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। গত দুই বছর করোনার কারণে সেভাবে ব্যবসা করতে পারিনি। এ বছর তালের দাম খুব। গাছ সব কেটে ফেলছে। তাল গাছ এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

২৪ বছর ধরে তালের ব্যবসা করেন ধুলিহর ইউনিয়নের আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, প্রথম দিকে তালের কুড়ি ছিল ৬ টাকা। এরপর বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক কুড়ি তাল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর শাঁসের কুড়ি ৮০-১০০ টাকা। আমি প্রতিটা গাছ কিনেছি ৩০০ টাকায়। সেই গাছের তাল বিক্রি করছি ৩০০০-৩১০০ টাকায়। প্রতিটা গাছে ২৭০০ টাকা লাভ হয়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে তাল গাছ সাতক্ষীরায় দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে আমরা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাল গাছ বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সাত উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরকে একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বজ্রপাত সহনশলী এই তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ করা হবে।

দিন দিন তালগাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ তালগাছের গুরুত্ব না বুঝে কেটে ফেলছে। যেহেতু তালগাছে বছরে একবার ফলন হয়, লাভ কম, সে কারণে তালগাছ কেটে অন্য ফল বা অন্য কিছুর আবাদ করছে। সে কারণে তালগাছ কমে যাচ্ছে। তালগাছ ফলন কম হলেও দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে, এটি দুর্যোগ সহনশীল একটি গাছ।

নুরুল ইসলাম বলেন, তালের শাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এটি মৌসুমী একটি ফল। তালের রসও অনেক উপকারী। তালের রস দিয়ে গুড়, মিসরি এসব তৈরি হয়। খেজুরের গুড়ের মতো এটিও পুষ্টিকর। বজ্রপাতের হাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করতে গেলে তালের গাছ দিয়ে গ্রিন বেষ্টনী গড়ে তোলা জরুরি। 

আকরামুল ইসলাম/আরএআর