ঝিনাইদহে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে তিন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বজ্রপাতে এক কৃষক ও দুটি মহিষের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২১ মে) সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে মুহূর্তেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হয়। 

এতে শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের স্বামী-স্ত্রী মাঠে বেগুন তুলতে গিয়ে বজ্রপাতের আঘাতে স্ত্রী রুপসী খাতুনের মৃত্যু হয় এবং স্বামী গোলাম নবী আহত হন। এছাড়াও সদর উপজেলার ডেফলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের দুটি মহিষ বজ্রপাতে মারা যায়।

সদর উপজেলার ৬ নং গান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আতিকুল হাসান মাসুল জানান, শনিবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। মুহূর্তেই বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়। ১০ মিনিটের এই ঝড়ে বাড়িঘর, আম, কলা, ফসল, বিদ্যুতের খুঁটি ও বিভিন্ন গাছ ভেঙে গেছে। ফলে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাতের কারণে আমার নির্বাচিত এলাকার ডেফলবাড়ি গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের দুটি মহিষ বজ্রপাতের আঘাতে গোয়াল ঘরেই মারা যায়। তার দুটি মহিষের দাম আনুমানিক ৬ লাখ টাকা। কৃষকের এমন ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

শৈলকুপা উপজেলার ১৪ নং দুধসর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাসাবুদ্দিন জানান, ইউনিয়নের কুলচারা গ্রামের গোলাম নবী বজ্রপাতে আহত হন এবং তার স্ত্রী রুপসী খাতুনের মৃত্যু হয়। সকালে তারা দুজনে বাড়ির পাশের মাঠে বেগুন তুলতে যায়। পরে ঝড় থামার পর স্থানীয়রা মাঠে গিয়ে তাদের অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক রুপসী খাতুনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত গোলাম নবীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর, রঘুনাথপুর, পিরোজপুর ও খোসালপুরসহ ১০টি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ, মালিপাড়া, তৈলটুপিসহ কয়েকটি গ্রামে পান ও কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ মিনিটের ঝড়ে সব শ্যাষ করে দিয়ে গেছে। গাছ-পালা ভাঙ্গে গেছে। কারেন্টের পোল ভাঙ্গে গেছে। রাস্তাঘাট অনেক সময় ধরে বন্ধ ছিল। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের অনেক গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, সকালে হঠাৎ করে খুব ঝড় শুরু হয়। এর আগে আম্ফানের সময় যে ঝড় হয়েছিল, তেমন ঝড় আজকে হয়েছে। আমাগের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আম বাগান, লিচু বাগান ও কলা বাগানের ক্ষতি হয়েছে।

কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ঝড়ে ৩৩টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। এছাড়াও ৩৩ কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আমাদের সব স্থানেই মেরামতের কাজ চলছে। বিকেলের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তালিকা শেষ হলে তারা যেন সহযোগিতা পায় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ খাদ্য উপকরণ পাঠানো হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর