থোকায় থোকায় ডালিতে সাজানোর বদলে মাটির ওপর বিছিয়ে রাখা হয়েছে লিচু। দাঁড়িপাল্লা ধরে বসে আছেন বিক্রেতা। বিক্রেতাকে ঘিরে ভিড় করছেন আগ্রহী উৎসুক ক্রেতারা। তারা বেছে বেছে পলিথিনে ভর্তি করছেন একটি একটি করে লিচু। এভাবেই ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি জাতের লিচু। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর হাটে কেজি দরে লিচু বিক্রির এমন দৃশ্য দেখা গেছে। শনিবার (২১ মে) বিকেলে হাটে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন ক্রেতা বিক্রি করছেন দেশি জাতের এই লিচু। বোঁটা ছাড়াই এসব লিচু ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

বিক্রেতারা বলছেন, নাটোরের সিংড়া থেকে এসব লিচু এনে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাটে খোলাবাজারে কেজি দরে বিক্রি করেন। 

একই বাজারে বোম্বাই ও দেশি জাতের লিচু থোকায় থোকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ কেজি দরের কম দামের লিচুর প্রতি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজার, নিউ মার্কেটসহ মল্লিকপুর হাটে থোকার লিচু ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। 

দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ কেজি দরে লিচু কেনার। বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এগুলো দেশি জাতের লিচু। পাড়ার সময় গাছ থেকে ঝরে পড়ে যাওয়া লিচুগুলো একসঙ্গে করে কম দামে আমরা কিনে নিই। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করি। বেশিরভাগ লিচু বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে ঝরে পড়ে যায়। তবে খেতে অন্যান্য লিচুর মতোই মিষ্টি। 

আরেক বিক্রেতা আবুল বাসার জানান, কেজি দরে হওয়ার কারণে অনেকেই এসে এই লিচু নিচ্ছেন। যেহেতু একটু পোকা আছে, তাই ক্রেতারা বেছে বেছে নিতে পারছে। সাইজে একটু ছোট হলেও লিচুগুলো ভালো। তাই বিক্রিও হচ্ছে অনেক বেশি। 

৮০ টাকা দিয়ে ১ কেজি লিচু কিনেছেন হাসান। তিনি বলেন, আগে খেয়ে দেখলাম। খেতে ভালোই লাগল। তাই পরিবারের জন্য এক কেজি লিচু কিনলাম। তবে কিছু কিছু লিচু নষ্ট আছে। তারপরও দাম কম হিসেবে খুব একটা খারাপ না। সুমিষ্ট দেশি জাতের লিচু এগুলো। 

আরেক ক্রেতা সাকিব আলী বলেন, সবার ভিড় দেখে এগিয়ে আসলাম। দেখি সবাই লিচু নিচ্ছে, তাও  আবার ৮০ টাকা কেজি দরে। খেয়ে ভালো লাগল, তাই আধা কেজি নিয়েছি। ৪০ টাকার আধা কেজি লিচু গুনে দেখলাম, প্রায় ৩৮টা আছে। তার মানে পিস প্রতি এক টাকা করে পড়েছে। 

কেজি দরে লিচু বিক্রির কারণে মল্লিকপুর হাটে প্রভাব পড়েছে থোকায় সাজানো লিচু বিক্রিতে। থোকায় লিচু বিক্রি করা শফিকুল ইসলাম বলেন, ৮০ টাকা কেজি ও ২০০ টাকা শ দরে পাশাপাশি লিচু বিক্রি হচ্ছে। কেজি হিসেবে এক টাকা করে লিচু পাচ্ছেন ক্রেতারা। তাই আমাদের লিচুতে ক্রেতাদের আগ্রহ কম। কেজি দরেই লিচু বেশি বিক্রি হচ্ছে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক উসমান গণি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষি বিপণনে লিচু বা তরমুজ কেজি দরে বিক্রির কোনো নিয়ম আছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে কৃষি বিপণনে যদি কেজি দরে বিক্রির নিয়ম না থাকে, তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর