কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া গ্রামের আবদুল মন্নাছের ছেলে সুজন মিয়া। পৈতৃক ভিটেমাটি নেই। জন্মের পর থেকে ফুফুর বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছেন। সম্প্রতি সুখিয়া ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে তার মা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। সেই ঘরেই স্ত্রী আর তিন বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে জামদানি শাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন সুজন।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, সরকারের দেওয়া ছোট্ট ঘরের পাশেই টিনশেডের বারান্দা তৈরি করে জামদানি শাড়ি তৈরির সরঞ্জাম বসিয়েছেন সুজন। ছোট্ট বারান্দায় চলছে স্বপ্ন বোনার কাজ। হাত আর সুতার কারুকাজ দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন জামদানি।

জানা গেছে, ১০ বছর বয়সে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুজন। সেখানেই তার জামদানি শাড়ি তৈরির হাতে খড়ি। এরপর কয়েক বছর সেখানে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। 

পাঁচ মাস আগে যখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে মায়ের নামে ঘর বরাদ্দ পান, তখন সেখান থেকে চলে আসেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে নিজেই জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন। একেকটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে ১৪-১৫ দিন সময় লাগে। পুরো শাড়ি সুতা দিয়ে হাতে করতে হয়। তাই সময় একটু বেশি লাগে। শাড়ি ভেদে একেকটি ১০-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

সুজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামদানি শাড়ি বাংলার ঐতিহ্য। শাড়ি তৈরির কাজ শিখতে আমার অনেক দিন সময় লেগেছে। এই কাজে অনেক সময়, শ্রম ও ধৈর্য লাগে। মাসে দুটি শাড়ির কাজ করতে পারি। একা কাজ করতে হয় বলে সময় বেশি লাগে। চাহিদা বেশি থাকলেও কারিগরের অভাবে সব অর্ডার রাখতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাইসহ চারজন যুবক জামদানি তৈরির কাজ শিখছে। বারান্দা ছোট হওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেককে কাজ শেখাতে পারি না। সরকারিভাবে সহায়তা করা হলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে জামদানি শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারতাম। বেকার নারী-পুরুষরা কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে পারত।

সুজনের স্ত্রী সেতু জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামদানি শাড়ি তৈরি করে যে আয় হয় তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। সরকার যদি আমার স্বামীকে সহায়তা করত, তাহলে বড় পরিসরে শাড়ি তৈরির কাজ করতে পারত। আমরাও ভালোভাবে চলতে পারতাম। অন্যরাও কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে পারত।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সুজনের কাছে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শিখতে আসা মোরসালিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ সুজন ভাইয়ের কাছ থেকে শিখতেছি। এলাকার কয়েকজন বেকার ছেলে সুজন ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখছে। আমরা যদি কাজ শিখতে পারি, তাইলে নিজেরাও কিছু একটা করতে পারব।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা সুজনকে পর্যবেক্ষণে রাখি। দেখি সে সত্যিই জামদানি শাড়ি তৈরি করছে। সুজনের তৈরি শাড়ি নারায়ণগঞ্জের শাড়ির কোনো অংশে কম নয়।

তিনি আরও বলেন, সুজনকে নিয়ে আমার একটি পরিকল্পনা আছে। বিশেষ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেসব নারী শুরু ঘরের কাজ করেন, তাদের একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। সেখানে সুজন ও তার পরিচিত তাঁতিরা তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। তারপর তাদের তাঁত কিনে দেব। এখানে এক দিন সুজনের মাধ্যমেই জামদানি শাড়ি তৈরির পল্লী হবে।

এসপি