সাত বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকাষা ইউনিয়নের মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণ করতে ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪১৭ টাকা খরচ হয়। তবে সেতুর অপর প্রান্তে সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকেই তা কারও কাজে আসছে না। বর্তমানে সেতুটি স্থানীয়রা গোবর শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, মনকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া, তারাপুর, ঠুঠাপাড়া, মুন্সিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা কালভার্টের ওপারে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে আম, ধান, পাটসহ মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করেন। এছাড়া কৃষি জমির পাশেই ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বিজিবির টহলের সুবিধার্থে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। 

সেতুটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে তার এক পাশে কাঁচা রাস্তা, অপর পাশে ডোবা থাকায় সেখানে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। তবে নির্মাণের প্রায় ৭ বছর পার হলেও সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এ কারণে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। বর্তমানে সেতুর ওপর গোবর শুকিয়ে জ্বালানি তৈরি করছেন স্থানীয় কৃষকরা। 

ঠুঠাপাড়া গ্রামের কৃষক সাদিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালের ওপারে সীমান্ত ঘেঁষে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। আম, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয়। এমনকি ধান কেটে রাখা থাকলেও আমরা একটা সংযোগ সড়কের কারণে ঘরে তুলতে পারছি না। এক ঘণ্টার রাস্তা এখন ৫-৬ ঘণ্টা ঘুরে ফসল তুলে আনতে হয়। সেতু পেয়েছি কিন্তু রাস্তা না থাকার কারণে তার কোনো সুফল ভোগ করতে পারছি না। 

স্থানীয় যুবক রাকিব হাসান জানান, ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ বছর আগে মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশের খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্যোগটি ভালো ছিল। অল্প সময়ে কৃষকরা নিজেদের জমিতে যাতায়াত করতে পারতেন। এছাড়াও সীমান্তে চোরাচালান রুখতে টহলও দিতে পারত বিজিবি। কিন্তু সংযোগ সড়কের অভাবে যে কাজে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা এখন হচ্ছে না।

কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে লোকসংখ্যা বেড়েছে। তাই যাদের খালের ওপারে জমি রয়েছে, তারা চাইছে ওই এলাকায় বাড়ি করতে। কিন্তু সংযোগ সড়কের অভাবে পারছে না। কয়েক দিন আগে দুই পাশের সংযোগ সড়কই ফাঁকা ছিল। তবে সম্প্রতি গ্রামের দিকে কিছু মাটি দেওয়া হয়েছে। আর অপর প্রাপ্ত পানিতে টইটম্বুর।  

রফিকুল ইসলাম নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালভার্টের পাশেই একটা কাঁচা রাস্তা আছে। আপাতত ওই রাস্তা দিয়েই সবাই যাতায়াত করছে। এতে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় হয়। তবে জমির ফসল ঘরে তুলতে এটা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নাই। সেতুর অপর পাশে মাটি ভরাট করে সংযোগ সড়ক বানানো হলে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবে।

মনকষা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো পরিকল্পনা ও সংযোগ সড়ক ছাড়াই অযথা ৩১ লাখ টাকা নষ্ট করে চলে গেছে। আমাদের কোনো কাজে আসছে না। রাস্তা না থাকায় জমিতেই পচে যাচ্ছে ধান। আমের দামের থেকে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আরও ভোগান্তিতে রয়েছে এখানকার কৃষকরা। গরুর গাড়িতে করে আম আনতেই দিতে হয় এক হাজার টাকা। তাই কয়েকটি গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক। 

মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে মুঠোফোনে তিনি জানান, বাজেট এলেই মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখানে কয়েকদিন আগেই যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, সম্প্রতি সেতুর এক পাশে মাটি ফেলা হয়েছে। অন্যদিকেও সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি