সরকারি ভর্তুকিতে নেওয়া কম্বাইন হারভেস্টারের কিস্তির টাকা পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় মেশিনের যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে এসিআই কোম্পানির কর্মচারীরা। এতে গেল কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টির পানিতে হেলে পড়া ধান কাটতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের দাবি, পাকা ধান কাটতে না পারায় গ্রামের প্রায় ৩০০ একর জমির ধান এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন মেশিনটির ক্রেতা কৃষক রুবেল মিয়া। পাশাপাশি তিনি সদর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।

যন্ত্রাংশ নিয়ে যাওয়ার ঘটনা গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের (১৯ মে)। রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের পালিচড়াহাট পূর্বকেশবপুর গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। ছয়দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত যন্ত্রাংশ ফিরে না পাওয়ায় ধানখেতে অচল অবস্থায় পড়ে আছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রুবেল মিয়া জানান, ২০২০ সালের মে মাসে কৃষি অফিসের ৫০ ভাগ ভর্তুকির মাধ্যমে নগদ সাত লাখ টাকা দিয়ে এসিআই কোম্পানি থেকে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি তিনি ক্রয় করেন। বাকি সাত লাখ টাকার মধ্যে গেল দুই বছরে করোনা মহামারির মধ্যে কষ্ট করে ৩ লাখ টাকা কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এই মেশিনটি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ এক মাস তিনি ব্যবহার করেন। বাকি সময়টা পড়ে থাকে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এবার মৌসুমের শুরুতে কম্বাইন হারভেস্টারের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়াতে তিনি এসিআই কোম্পানি থেকে এক লাখ টাকার যন্ত্রাংশ ক্রয় করেন। ক্রয় করা কিছু যন্ত্রাংশ গাড়ির সঙ্গে ফিটিং না হওয়ায় সেগুলো কোম্পানিকে ফেরত দেন। কিন্তু কোম্পানির লোকজন যন্ত্রাংশগুলো ফেরত নেননি। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে মেশিনটি মেরামত করে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেন।

রুবেল মিয়ার অভিযোগ, গত ১৯ মে সকালে এসিআই কোম্পানির দুজন কর্মকর্তা তার বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের কিস্তি চান। কিন্তু ওই সময় তার হাতে ২০-৩০ হাজার টাকা থাকায় তিনি তাদের বিকেলে দেখা করার কথা জানিয়ে বিদায় দেন। কিন্তু তারা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে কাউকে না জানিয়ে ধানখেতে গিয়ে কম্বাইন হারভেস্টার চালকের সঙ্গে কথা বলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গাড়িটি অচল অবস্থায় ফেলে রেখে যান। এ ঘটনার পর এলাকার কৃষকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন।

ব্রি, বিনাসহ অত্যাধুনিক জাতের নিত্য নতুন ধান বীজ নিয়ে উৎপাদন ও সরবরাহ করে আসছেন দাবি করে এই কৃষক জানান, তার নিজের ২০ একর জমির পাকা ধান সঠিক সময়ে কাটতে না পারায় এখন পানিতে হেলে পড়েছে। এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের উৎপাদিত ধান এই মেশিনে কাটা ও মাড়াই করার কথা ছিল। কিন্তু যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাওয়াতে তাদের প্রায় ২৫০-৩০০ একর জমির ধান এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম। ছয়দিন ধরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি পড়ে থাকায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসিআই কোম্পানির রংপুর অফিসে কর্মরত রিকভারি অফিসার শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছরের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করার চুক্তিতে ওই কৃষক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি ক্রয় করেছিলেন। কিন্তু তিন বছর হচ্ছে, এখনো তার কিস্তি পরিশোধ হয়নি। আমরা তার কাছে কিস্তির টাকা চাইতে গেলে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাকে একাধিকবার কিস্তির টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য সর্তক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোম্পানির শর্ত উপেক্ষা করে চলছেন। বর্তমানে তার কাছে বকেয়া চার লাখ ২০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। আমাদের টেরিটোরি ম্যানেজার সালাউদ্দিন শাওন স্যারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ওই কৃষক টাকা পরিশোধ করতে আরো কিছুদিন সময় চেয়েছেন। তবে পুরো বিষয়টি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।  

সরকারি ভর্তুকিতে ক্রয় করা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়া অপরাধ কি না, জানতে চাইলে সদর কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক মাস আগে এসিআই কোম্পানির লোকজন আমাকে ওই কৃষকের কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি অবগত করেন। আমি কৃষক রুবেলকে কিস্তি পরিশোধ করার জন্য বলেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভর্তুকি দিয়েছি যাতে সুবিধাভোগী কৃষকরা কোম্পানির শর্ত অনুযায়ী বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু ওই কৃষক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে বহুবার কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে গাড়িটি ক্রয় করাতে আমরা প্রথম এক বছর নিয়মানুযায়ী ওই কৃষককে সবধরনের সহযোগি করেছি। এরপর যদি উনি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, এর দায় তো আমাদের নয়। তবে আমি উভয়পক্ষকে বসিয়ে একটা সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছি।

এমএএস