লিচুর জন্য বিখ্যাত নাটোরের গুরুদাসপুর। উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মোজাফ্ফর জাতের লিচু চাষ হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার উপজেলায় ২৪ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবে।

জানা গেছে, উপজেলার লিচুর আড়তগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লিচু চাষি, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তগুলোতে প্রতিদিন ৫০-৬০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর বটতলা লিচুর মোকামে দেখা যায়, লিচুর জমজমাট বেচাকেনা চলছে। স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা সেখানে ভিড় করছেন। ভ্যান-রিকশা করে লিচু নিয়ে আসছেন স্থানীয় কৃষক ও বাগানিরা। এরপর চলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। সবশেষে লিচু প্যাকেজিং করে ট্রাকযোগে চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মোট ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। মোট লিচুর বাগানের সংখ্যা ২০৫টি। চলতি মৌসুমে তিন হাজার মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৪ কোটি টাকা।

মেহেদি ফলভাণ্ডার আড়তের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান বলেন, গুরুদাসপুরে লিচুর উৎপাদন বাড়ায় ১৫-২০টি আড়ত গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক ভর্তি লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন।

আল্লাহর দোয়া ফল ভাণ্ডার আড়তের স্বত্বাধিকারী সেলিম হোসেন বলেন, এ বছর লিচুর উৎপাদন বেশি হলেও দাম কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকায় আড়তে লিচু কেনাবেচা হয়েছে। এ মৌসুমে আড়তে প্রতি হাজার লিচু প্রকারভেদে ১২০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ বছর ধরে এ মোকাম থেকে লিচু কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এলাকার লিচুর আকার, রঙ, স্বাদ অনেক ভালো। এছাড়া এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক ভালো। এজন্য এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি।’

যশোরের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, আড়তে লিচুর আমদানি পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু এ বছর লিচুর আকার কিছুটা ছোট। যার কারণে দামও কিছুটা কম। তবে লিচুর আকার বড় হলে চাহিদা এবং ভালো দামে বিক্রি করা যায়।

আড়ত কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, লিচুর হাটকে ঘিরে ১৭টি আড়ত রয়েছে। চলতি মৌসুমে  মোকামের ডাক হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে গড়ে ৫০-৬০ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে।

নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে ওই মোকামে লিচুর বেচাকেনা চলছে।  হাটে লিচু বেপারি, কৃষক ও বাগানিদের সার্বিক সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুরুদাসপুরে ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে ১০ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। লিচুর আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষি বিভাগ সময়মতো কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়। এখানকার লিচু সুস্বাদু হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়।

তাপস কুমার/এসপি