মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ৯ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপন দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব ক্লিনিকটি সিলগালা ও ৯ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্লিনিকের সিকিউরিটি গার্ড আজিজুর রহমান ও আব্দুল করিমকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারী পারভীন আক্তার, ফাতেমা আক্তার, সুমি আক্তার, শিল্পী আক্তার, আব্দুল বাতেন, মনির হোসেন ও  হাসপাতালের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী মান্না তানিয়াকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার এই হাসপাতালে অস্ত্রোপাচারের পর সাবিনা নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। সাবিনা উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামের মুখলেছ মিয়ার স্ত্রী।  

এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফারহানা নবিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. ফারহানা নবি বলেন, ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তকালে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপন তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। সরকারি কাগজে-কলমে সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে কোনো কোনো হাসপাতাল নাই। যিনি প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি কোনো ডিগ্রিধারি চিকিৎসক নন। এমনকি যে ডাক্তার অজ্ঞান করেছেন তারও কোনো ডিগ্রি নেই।

ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বলেন, সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। সরকারি নিবন্ধনে প্রতিষ্ঠানটির নাম পাওয়া যায়নি। একজন ডাক্তার ও ৫ জন নার্স রয়েছেন ওই হাসপাতালটিতে। অভিযান চলাকালে মালিক নজরুল ইসলাম পালিয়ে যান। ক্লিনিকটির সাথে জড়িত ৯ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমোদন না থাকায় তা সিলিগালা করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. নুজহাত নওরীন আমীন বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, প্রসব বেদনা উঠলে গত শনিবার রাত ১১টার দিকে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয় সাবিনাকে। রাত ৩টার দিকে তার অস্ত্রোপচার করেন ডা. ইমা বিনতে ইউনুছ। সাবিনার একটি মেয়ে সন্তান হয়।  

সাবিনার পরিবারের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে মাত্রারিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে তার মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মৃত অবস্থায় সাবিনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

সোহেল হোসেন/এনএফ