মালদার বাড়ি

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বাবা মাখন লাল সাহার নামে এখনও বিদ্যুৎ বিল আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া এলাকার মালদার বাড়িতে। সেই বিল নিয়মিত পরিশোধও হচ্ছে। দেশ ভাগের আগে এই মালদার বাড়িতেই ছিল মাখন লাল সাহার পরিবারের বসবাস। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল ত্রিপুরার অংশে। সম্প্রতি মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তার বাবার নামে মালদার বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি এ রোডস্থ মাজারগেট দিয়ে কাজীপাড়া এলাকায় ঢুকতেই মাখন লাল সাহার সেই আদি বাড়ির অবস্থান। ২৪ শতাংশ জায়গার বাড়িটিতে এখন মালদার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। মাখন লাল সাহা যে ঘরটিতে থাকতেন, তার পাশে আরও কয়েকটি ঘর-বাড়ি হয়েছে। এর সঙ্গে আছে বেশ কিছু দোকানঘরও।

মালদার পরিবারের সদস্যরা জানান, ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরের ধলেশ্বর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম মালদারের পরম বন্ধু ছিলেন মাখন লাল সাহা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মাখন লাল সাহা ও নুরুল ইসলাম মালদারের পরিবার নিজেদের বাড়ি বিনিময় করে। বাড়িটিতে এখন নুরুল ইসলাম মালদারের পরিবার এবং তার ভাইদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে।

তবে বিনিময় হলেও প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মাখন লাল সাহার নামে রাখেন নুরুল ইসলাম মালদার। বন্ধুর স্মৃতি যেন মুছে না যায়, সেজন্য মৃত্যুর আগে সন্তানদেরও বিলের কাগজে নাম পরিবর্তন না করার নির্দেশ দেন তিনি।

নুরুল ইসলাম মালদারের ছেলে শরীফুল ইসলাম মালদার জানান, তার বাবা ত্রিপুরার আগরতলা থেকে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কলেজে লেখাপড়া করতেন। সেই সুবাদে মানিক লাল সাহার সঙ্গে তার বাবার বন্ধুত্ব হয়। এরপর দেশ ভাগের সময় দুই বন্ধুর ইচ্ছায় তাদের পরিবার নিজেদের মধ্যে বাড়ি বিনিময় করে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মাখন চাচার বাড়িতে আসি, তখন বিদ্যুতের একটি মাত্র সংযোগ ছিল। বাবা মৃত্যুর সময় আমাদের বলে গিয়েছিলেন, মাখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তার স্মৃতি ধরে রাখতে বিদ্যুৎ বিলে তার নাম দেওয়া হয়েছে। এটি যেন আমরা পরিবর্তন না করি। সেজন্য আমরা নাম পরিবর্তন করিনি। আমাদের সেই মাখন চাচার ছেলে মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত।’

এদিকে মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই আনন্দে ভাসছেন নূরুল ইসলাম মালদারের পরিবারের সব সদস্য ও আশপাশের বাসিন্দারা। যদিও মানিক সাহার খুব একটা যাতায়াত নেই তার আদি বাড়িতে। মালদার পরিবারের চাওয়া, মানিক সাহা যেন একবার অন্তত এসে তার পৈতৃক আদি বাড়িটি দেখে যান।

মালদার পরিবারের আরেক সদস্য সালমা আক্তার বলেন, ‘মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত এবং গর্বিত। আমরা চাই তিনি যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে আমাদের এবং তার পৈতৃক বাড়িটি দেখে যান। এই বাড়িতে তার বাবার অনেক স্মৃতি আছে।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিতরণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা বিলের কাগজে গ্রাহকের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেননি বলেই এখনও মাখন লাল সাহার নামেই বিল যাচ্ছে। বিল নিয়মিত পরিশোধও হচ্ছে। কোনো বকেয়া নেই। এখন যদি গ্রাহকের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়, তাহলে কাগজপত্র দেখে পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।

আজিজুল সঞ্চয়/এসপি