পৌরকর বকেয়া, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে বর্জ্যের স্তুপ
বকেয়া পৌরকর পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের বর্জ্য পরিষ্কার করা বন্ধ করে দিয়েছে পৌরসভা। প্রায় দুই মাস ধরে বর্জ্য পরিষ্কার না করায় হাসপাতালের উত্তর দিকে ডাস্টবিন সংলগ্ন রাস্তায় বর্জ্যের স্তূপ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্য না নেওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী, চিকিৎসক, সেবিকা ও স্থানীয়দের।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল শহরের প্রাণকেন্দ্র মুজিব সড়কের উত্তর দিকে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয় ১৯১৭ সালে। হাসপাতালের পূর্ব পাশেই রয়েছে ফরিদপুর পৌরসভা ভবন। পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৮৬৯ সালে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকে ডায়রিয়া ও ডান দিকে সার্জারি ওয়ার্ড। তার একটু সামনে উত্তর দিকে লাল রঙের থোকা থোকা ফুল ফুটে থাকা একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ওই গাছের নিচে চোখ পড়তেই দুই চোখ ছানাবড়া। ডাস্টবিন উপচে হাসপাতালের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়।
এ রাস্তা দিয়েই যাওয়া-আসা করতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকাসহ ৩টি আবাসিক ভবনে বসবাসকারী ১৭টি পরিবারের সদস্যদের। ময়লার অদূরে পশ্চিমপাশে হাসপাতাল জামে মসজিদ। ওই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও আশেপাশের লোকজন নিয়মিত নামাজ পড়েন।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুর সদরের বখুন্ডা এলাকা থেকে শামীমা আক্তার (২৬) তার ছেলে সাইফুলকে (৬) নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, স্তুপ হয়ে পড়ে থাকা ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের উত্তর পাশের জানালাগুলি খোলা যাচ্ছে না। যে অবস্থা তাতে রোগ সারাতে এসে নতুন রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে না হয়।
মধুখালী উপজেলার রাসেল ফকির (২২) তার মামা জাহিদ হোসেনকে (৪৪) নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, জমে থাকা আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছে।
হাসপাতালের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া পাশের খান বেকারির কর্মচারী সদরের চাঁদপুরের মো. রজব আলী (২৭) বলেন, প্রতিদিনই মসজিদে নামাজ পড়ি। সবসময় মসজিদে গন্ধ আসে। আগে কোয়াটার এলাকার নলকুপ থেকে পানি আনতাম। এখন গন্ধে পানি আনতে যাই না।
শহরের বাদামতলি সড়কের বাসিন্দা সিনিয়র স্টাফ নার্স মর্জিয়া খানম (৫৪) বলেন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে। পাশে ডায়রিয়া ওয়ার্ড থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়ছে। আমরা ওয়ার্ড মাস্টারের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বলেছি, কিন্তু কাজ হয় না।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, দূষিত পরিবেশের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পৌরকর বাকি থাকায় পৌরসভা গত দুই মাস ধরে ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
ফরিদপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২০২২ অর্থ বছর পর্যন্ত নয় বছরে পৌরকর বকেয়া রয়েছে এক কোটি ৬৪ লাখ ১২ হাজার ৮৩ টাকা। এ টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে বর্জ্য অপসারণ করা বন্ধ করে দিয়েছে পৌরসভা।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, পৌরকর বকেয়া রেখে চলতি বছরের টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চলতি বছরের টাকা দিতে হলে বকেয়াসহ দিতে হবে। আমার জানা মতে সিভিল সার্জন বকেয়ার টাকা পেয়েছেন, কিন্তু পৌরকর পরিশোধ করছেন না। বকেয়া টাকা না পেলে ময়লা পরিষ্কার করব কীভাবে? আমাকে তো কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, যে বকেয়া জমা হয়েছে তা আমি এ কর্মস্থলে আসার বহুদিন আগের। উচিত ছিল বছর অনুযায়ী পৌরকর আদায় করা। বকেয়া প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল।
সঙ্গে সঙ্গে এ টাকা প্রদানের জন্য পৌরসভার থেকে বছরওয়ারী বকেয়া হিসাব ও হিসাব বিভাগ থেকে বিগত বকেয়া বছরের পৌরকর বাবদ কোনো টাকা জমা পড়েনি- মর্মে লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলেছিলাম। আমি পৌরসভা ও হিসাব বিভাগের সেই দুটি প্রতিবেদন পাইনি বলে বকেয়ার টাকা প্রদান করতে পারছি না।
জহির হোসেন/আরআই