প্রতারক আফজাল করিম ও তার কাছ থেকে উদ্ধার করা নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প

পারিবারিক সমস্যা সমধান ও গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে নীলফামারীর একটি পরিবারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন এক প্রতারক। নিজেকে জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে সব কেরামতি করেন তিনি। সম্প্রতি পুলিশ আটক করেছে আফজাল করিম নামের ওই প্রতারককে। 

আফজাল করিমের সর্বশেষ প্রতারণার শিকার আশরাফ আলী। এই আশরাফ আলীর পরিবারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়েছে আফজালকে। জিনের সাথে চুক্তি করার কাজে ব্যবহৃত নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পও উদ্ধার করা হয়েছে আফজালের বাড়ি থেকে। 

ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিজেকে জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আশরাফ আলীর বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চায় আফজাল। সাহায্য হিসেবে এক কেজি চাল দেওয়া হলেও প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পায়নি পরিবারটি। প্রতারক একটি কোরআন শরীফও চান তাদের কাছ থেকে। কিন্তু কোরআন শরীফ বাড়িতে না থাকায় আরও ১৫০ টাকা দেওয়া হয় তাকে। 

এরপর ফন্দি বের করে আফজাল করিম ভুক্তভোগী পরিবারটিকে বলেন, তোমার বাসায় বদ জিন বাসা বেঁধেছে। তাড়ানো না হলে তোমার স্ত্রী-সন্তানের ক্ষতি করার পরে তোমার ক্ষতি করবে। এই বলে আশরাফ আলীর ফোন নম্বর নিয়ে যায় ওই প্রতারক। একদিন পরেই ফোন দিয়ে বদ জিন তাড়ানোর জন্য দাবি করে ৩০ হাজার টাকা। আর খুব তাড়াতাড়ি তাড়ানো না হলে নানান সমস্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্কে রাখে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে। আতঙ্কে সপ্তাহ জুড়ে টাকার সন্ধানে ছুটে অসহায় পরিবারটি ১৫ হাজার টাকা প্রতারকের বিকাশে দিতে সক্ষম হয়। টাকা হাতে পেয়ে ভুক্তভোগীর বাড়িতে জিনের বাদশাহ আসেন জিন তাড়াতে। 

এক পর্যায়ে বাড়ির সকলকে বের করে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে একটি বাক্সে রাখেন লাল কাপড়ে মোড়ানো একটি পুঁটলি। তারপর সকলকে বাড়িতে আসতে বলেন ওই প্রতারক। আশার বাণী শুনিয়ে চলে যাওয়া প্রতারকের প্রতারণা শুরু হয় দু’দিন যেতে না যেতেই। জিনের গুপ্তধনের সন্ধানের হদিস মিলেছে বলেই বাক্সে তালা দিয়ে রাখার পরামর্শ ও চাবিটি চান ওই প্রতারক। এমনকি অনুমতি ছাড়া বাক্সটি খুলতেও নিষেধ করা হয়। এরপর কৌশলে আশরাফ আলীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর তার ভাস্তি রাশিদা বেগমের কাছ থেকে নেয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে আরও টাকা চেয়ে ভয়ভীতি দেখানো হলে ৩০ হাজার টাকা জিনের বাদশাহর বাড়িতে গিয়ে দেওয়া হয়।  

আশরাফ আলী বলেন, বদ জিন তাড়ানোসহ নানান কৌশলে আমাদের ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি জিনের গুপ্তধন দেওয়ার কথা বলে পূর্বে ক্রয়কৃত ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি ও ৫০টাকা মূল্যের ৩টি নন-জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নিয়ে রেখেছে। ওই স্ট্যাম্পে আমার স্ত্রী আছফুল বেগম, ভাস্তি রশিদা বেগম ও আমার স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়। স্বাক্ষর নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল- জিনের বাদশাহর সম্পত্তির সাথে স্ট্যাম্পগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা তার প্রতারণার শিকার হয়ে আবাদি জমি, গরু-ছাগল গহনা বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন ওই প্রতারক আমাদের কাছে ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করে। না হলে মামলার বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। 

যখন বুঝতে পেরেছি জিনের বাদশাহ আমাদের সাথে প্রতারণা করছে। তখন থানায় মামলা করি।  

নীলফামারী সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী বলেন, কথিত জিনের বাদশাহ আফজালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বাক্ষরিত নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন। 

শরিফুল ইসলাম/এনএফ